আজহারুল হক, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার আমজাদ হোসেন প্রথম সংসার করেন তেত্রিশ বছর আগে। সেই বিয়ে গোপন করে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে পরের বছর আরেক বিয়ে। একে একে নয়টি বিয়ে করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। সংসারের বাঁধন তার কপালে নেই। বিয়ে করেন আর তালাক দেন। এভাবে খুইয়েছেন পত্রিক সম্পত্তি। এই অস্থির প্রকৃতির আমজাদ হোসেন শেষমেষ মায়ের গলায় দা ধরে জোর পূর্বক বিক্রি করে দেন মায়ের নামের জমিটুকুও। এই বিয়ে পাগল আমজাদ হোসেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের চানপুর সীতারচর গ্রামের বাসিন্দা। সম্প্রতি এই ব্যক্তির উপর তার মা ও ছেলেরাসহ প্রতারণার অভিযোগ করেছেন গ্রামের অর্ধ শতাধিক মানুষ। এলাকাবাসী জানান, বিয়ে করাই আমজাদের নেশা ও পেশা। আমজাদ একের পর এক বিয়ে করে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছেন। তার এসব কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে ভালুকা মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন আমজাদের বৃদ্ধ মা সবুর জান (৭৫) ও আরেক স্ত্রী জামিরন। বিয়ে পাগলা আমজাদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তার নিজের ঔরসজাত দুই ছেলেও। সম্প্রতি তার দুই ছেলে সুজন ও সুমন বাড়ির পাশে ৬৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। ওই জমি থেকেও তিনি ৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। আর তা জানতে চাওয়ার অপরাধে ছেলে সুমনকে মারধর করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আনুমানিক ৩৩ বছর আগে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার হাইসক্লেল এলাকার পারুল আক্তারকে প্রথম বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিন ছেলে রয়েছে। ২০০৫ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার বানিয়াছিট এলাকার জামিরন নেছাকে। ওই ঘরে আশামনি নামে ১২ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। বছর না পেরোতেই প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী রেখেই ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের রাইজুদ্দিনের মেয়ে রেহেলা খাতুনকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে ঘরে তোলেন। বছর দেরেক সংসার করার পর তৃতীয় স্ত্রী রেহেলাকে তালাক দেন। এর মাশুল হিসেবে আমজাদকে গুনতে হয়েছে মোটা অংকের টাকা। তবুও বিয়ের নেশা ছাড়েনি তাকে। কিছুদিন পরেই উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ডুবনিঘাট এলাকার খালেক ক্বারীর মেয়ে লাইলী বেগমকে বিয়ে করেন। এটি আমজাদের ৪র্থ স্ত্রী। ৫ম বারের মতো বিয়ে করে আমজাদ ঘরে নতুন বউ আনেন সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের আছমা খাতুনকে। এবাবেই একেক করে তিনি করেছেন নয়টি বিয়ে। সর্বশেষ নবম স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে ঘরে তুলেছেন আছিয়াকে। তার প্রতারণার শিকার দ্বিতীয় স্ত্রী জামিরন বলেন, ‘প্রেমের অভিনয় করে আমাকে তার জালে জড়িয়ে বিয়ে করে। তখন সে নিজেকে অবিবাহিত বলে দাবী করেন। তার কথা বিশ^াস করে আজ আমি ঠকেছি। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অনেকটা মানবেত জীবন যাপন করছি। তবে তার প্রথম সংসারের ছেলেরা যথেষ্ট ভালো। প্রায়ই তারা আমার ও আমার মেয়ের খোঁজ নেয়। মাঝে মধ্যে হাত খরচও দেয়। বিয়ে পাগলা আমজাদের বৃদ্ধ মা অভিযোগ করে বলেন, বিয়ে করতে গিয়ে আমার স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া সহায় সম্পতি সব বিক্রি করে দিয়েছে আমজাদ। তাতেও ক্ষান্ত দেয়নি। একের পর এক বিয়ে করেই গেছে। সম্প্রতিও আরেকটি বিয়ে করেছে। এর ভয়ে সর্বক্ষণ তটস্থ থাকি। বিয়ে করতে গিয়ে নিজের সম্পতি সব বিক্রি করে দিয়ে আমার নামে থাকা সম্পতিগুলোও গলায় দা ধরে বিক্রি করে দিয়েছে। বৃদ্ধা আরও বলেন, আমার বড় ছেলে শাহজানকেও সে বাড়িতে আসতে দেয় না। এ অবস্থায় বড় ছেলে প্রায় ২০ বছর যাবত টাঙ্গাইলের সখিপুরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করে। এখন আমি ছেলে আমজাদের উপযুক্ত বিচার চাই। স্থানীয় ডাকাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমজাদ এখন পর্যন্ত অনেকগুলো বিয়ে করেছেন। এসব করতে গিয়ে নিজের সম্পতি খোয়ানোর পাশিপাশি তার মায়ের সম্পতিও মারধর করে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমজাদ তার বৃদ্ধ মাকে খুবই অত্যাচার করেন। এ নিয়ে আমি দরবার করলেও সে তা গ্রাহ্য করেনি। ঈদের পর ওইখানে গিয়ে পূনরায় বিষয়টির সুরাহা করার চেষ্টা করবো। এ ব্যাপারে ভালুকা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মেহেদি হাসান বলেন, এসব বিষয়ে ওই এলাকায় পুলিশ পাঠিয়ে অভিযুক্ত আমজাদকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। এর পরেও সে তার মাকে অত্যাচার নির্যাতন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।