ষ্টাফ রিপোর্টা:- ময়মনসিংহের ভালুকায় নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রী রাখিয়া সুলতানা রিয়া হত্যা ঘটনার মূল ঘাতক স্বামী রিপনকে চারদিন পর গ্রেপ্তার এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে। টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার গোরাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রিপন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার স্ত্রী রিয়াকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে এবং শনিবার সকালে তাকে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ভালুকা মডেল থানা পুলিশ জানায়, স্কুল ছাত্রী খুন হওয়ার পর থেকে ভালুকা মডেল থানা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা মূল ঘাতকসহ অপরাপর আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার বিকেলে ঘাতক স্বামী রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রিপনের উদৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, এক বছর আগে বিয়ে করে ঘাতক রিপন বিদেশ চলে যাওয়ার পর স্ত্রী রিয়া তার বাবার বাড়ি চলে আসে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাবার বাড়ি থেকে আনতে পারেননি। এমনকি তার স্ত্রী ফোনে তাকে জানায়, সে আর তার বাড়িতে যাবে না এবং দেনমহরের আট লাখ টাকা দেয়ার জন্য বলে। এক সময় তার স্ত্রী তার সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে তিনি দেশে এসে প্রথমে সখীপুরে বাসা ভাড়া নেয় এবং তার স্কুলেও খোঁজ নেয় সে। কিন্তু কোন উপায় না দেখে সে তার স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পানা করে। খুনের আগের দিন সে একটি দা কিনে এবং গত সোমবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে স্ত্রীর বাড়ির পাশে সে দাঁড়িয়ে থাকে। বেলা ১২ টার সময় স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রিয়া যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখর সে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এ সময় তাদের দু’জনের মাঝে কথাকাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে স্ত্রী রিয়া তাকে ধাক্কা দিয়ে পাশের বোরো ক্ষেতে ফেলে দেয়। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করে চলে যায়। জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সমাপনী প্রস্তুতি পরীক্ষা দেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় উপজেলার বাটাজোর বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রাখিয়া সুলতানা রিয়া। বাড়ি থেকে আনুমানিক একশ গজ দূরে মুখ মোড়ানো ও মাথায় ক্যাপ পড়া এক ব্যক্তি রিয়াকে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তখন রিয়া তাঁর মাকে ডাক দিয়ে চিৎকার করে দৌঁড়াতে শুরু করে। তখন হামলাকারী পেছন থেকে রিয়ার ঘাড়, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে। মেয়ের চিৎকার শুনে মা মাজেদা খাতুন দৌঁড়ে এসে পাশের ধান খেত থেকে কাঁদা মাখা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন। পরে মাজেদা খাতুনের ডাক-চিৎকারে অন্যরা ছুটে আসেন। কিন্তু হামলাকারীকে তারা ধরতে পারেননি। পরে তারা মেয়েটিকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতেই রিয়ার বাবা আব্দুল রশিদ বাদি হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামি দিয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। উল্লেখ্য, উপজেলার বাটাজোর বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রাখিয়া সুলতানা রিয়া। সে বাটাজোর গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে। গত এক বছর আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মাওশা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে প্রবাসী রিপন মিয়ার সাথে বিয়ে হয় রিয়ার। বিয়ের পর রিপন সৌদি আরব চলে যান। এরপর রিয়ার উপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ ওঠে। ছয় মাস আগে বাবার বাড়ি ফিরে আসে রিয়া। কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার পড়া লেখা শুরু করে মেয়েটি। ভালুকা মডেল থানার ওসি মোঃ কামাল হোসেন জানান, স্কুলছাত্রী রিয়ার স্বামী ঘাতক রিপন মিয়াকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।