মোহাম্মদ সেলিম,ত্রিশাল থেকে:-
‘নজরুলের সাহস, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, রবীন্দ্রনাথের শান্তির দিশা বাঙালির সঞ্চয়’
জাতীয় জীবনে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল দুই ধ্রুব তারকার নাম। আমাদের সৌভাগ্য বাঙালি পেয়েছে নজরুলের সাহসী পদযাত্রা, বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন নেতৃত্ব ও রবীন্দ্রনাথের শান্তির বিশ্বের অসীম দিশা। এটাই আমাদের সঞ্চয়। আমরা তাঁদের আদর্শ বুকে ধারণ করেই গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও বিশ্বজয়ের যে অভিযাত্রা তা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার সকালে প্রশাসনিক ভবনের কনাফরেন্স কক্ষে রবীন্দ্র নজরুল-প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সেমিনারটি আয়োজন করে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একাত্তর সালে আমাদের এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু এই দুই ধ্রুব তারকার কাছ থেকে অণুপ্রেরণা নিয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে সম্মান দিয়ে স্বাধীন দেশে একজনের সঙ্গীত জাতীয় সঙ্গীত ও অন্যজনের সঙ্গীত রণ সঙ্গীত করেছিলেন এবং কাজী নজরুল ইসলামকে করেছিলেন আমাদের জাতীয় কবি।স্বাধীনতার পর রবীন্দ্র-নজরুলের আদর্শকে জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে। আর সেজন্যই ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে সংবিধানে ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সে ধারায় ছেদ পড়ে। ড.সৌমিত্র শেখর বলেন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল উভয়ে দেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন, তারপর চেয়েছিলেন জাতীয় মুক্তি। কেননা স্বাধীনতাই শেষ কথা নয়। ১৯১৯ সালে ইঙ্গ আফগান চুক্তির মধ্যদিয়ে আফগানিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। কিন্তু সে দেশের কী অবস্থা সেটা এখন আমরা দেখতে পারছি। নজরুল এমন স্বাধীনতা প্রত্যাশা করেন নি। নজরুল ডাক দিয়েছিলেন নবযুগের। এই নবযুগ হলো-স্বাধীনতার পর দেশ গঠন ও বিজ্ঞান মনষ্কতার সৃষ্টি। একেই তিনি বলেছেন অত্মার মুক্তি। বঙ্গবন্ধু দেশে স্বাধীনের পর সেই নবযুগের ডাক দিয়েছেনে তার দ্বিতীয় বিপ্লবের মধ্যদিয়ে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন মানবপ্রেমের কথা। বঙ্গবন্ধু মানবপ্রেমের অদৃশ্য সুতায় দেশের মানুষকে বেঁধেছিলেন।
কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড.মুশাররাত শবনমের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার। স্বাগত বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. তারানা নুপুর ও সঙ্গীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুবীর কুমার চক্রবর্তী। আলোচনা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. তারেক রেজা। সেমিনারের শুরুতে রবীন্দ্র ও নজরুলের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্প ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। একই অনুষ্ঠানে সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের মৃত্যুতে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এদিকে রবীন্দ্র-নজরুল প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়ধ্বনি মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এ সময় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা। এছাড়া আবৃত্তি ও প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশন করা হবে।