সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

“প্রভাব পড়তে পারে জাতীয় নির্বাচনে” ভালুকা উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন স্থগিত হতাশ নেতাকর্মীরা

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩, ৪.৩৯ এএম
  • ১৬০ বার পাঠিত

খলিলুর রহমান:- ময়মনসিংহ জেলার শিল্পাঞ্চল খ্যাত ভালুকা উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন স্থগিত হওয়ার পর প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও পূণরায় সম্মেলন বা কমিটি ঘোষনা না হওয়ায় একদিকে হতাশায় ভোগছে তৃণমুলের নেতা-কর্মীরা অপরদিকে ঝিমিয়ে পড়েছে স্থানীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমনটাই বলছেন, আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। গত ৩০ নভেম্বর/২০২২, ভালুকা উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সম্মেলন স্থগিত রয়েছে। প্রায় বিশ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনকে ঘিরে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিলো তৃণমুল নেতা-কর্মীদের মাঝে। সরগরম হয়ে উঠেছিলো ভালুকার রাজনৈতিক অঙ্গনও। আকস্মিক স্থগিত হওয়া সম্মেলন পূণরায় না হওয়া বা কমিটি ঘোষনা না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা, ঝিমিয়ে পড়েছে উৎসাহ উদ্দীপনা ও সাংগঠনিক কর্মতৎপরতাও। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এর নেতিবাচক পভাব পড়তে পারে এমন আশংঙ্কা ও করছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। পূণরায় সম্মেলন নাকি কমিটি এনিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে, পুণরায় সম্মেলন বা কমিটি ঘোষণা যাই হোক দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি চায় তৃণমুল। উপজেলা আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতা-কর্মীরা বলছেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ঝিমিয়ে পড়া অবস্থায় আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। দলীয় সূত্রে জানাযায়, ২০০৩ সালে ভালুকা উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সেই সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ভালুকা থেকে চার চারবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. এম আমান উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন এ.বি.এম আফরোজ খান আরিফ। এর পর প্রায় বিশ বছরে আর কোন সম্মেলন হয়নি ভালুকা উপজেলা আওয়ামীলীগের। যেখানে অন্তত ৫টি সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। পদ প্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন, নিয়মিত সম্মেলন হলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হত। ইতিমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন অধ্যাপক ডা. এম আমান উল্লাহ’সহ চলমান কমিটির ১৮ জন নেতাকর্মী। অধ্যাপক ডা: এম আমান উল্লাহ ও গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বাধিন বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে টানা পাঁচটি সংসদ নির্বাচন, তিনটি পৌর নির্বাচন, একটি উপজেলা ও দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জন করে আওয়ামীলীগ। বিগত টানা পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনে ভালুকা থেকে নৌকার বিজয় অর্জিত হলেও বর্তমান সাংগঠনিক অচলাবস্থায় নির্বাচন হলে টানা পাঁচ বারের বিজয়ের এই ধারাবাহিকতা থাকবে, নাকি ছন্দপতন ঘটবে এনিয়েও হিসাব নিকাশ চলছে আওয়ামী বলয়ে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আরো গভীরে। কারা আসছে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে, কাদের হাতে থাকবে আওয়ামীলীগের আগামী দিনের নেতৃত্ব। তৃণমুল আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা চায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের অনুসারী, ত্যাগী, পরীক্ষিত, দীর্ঘ দিনের পুর খাওয়া রাজপথ থেকে উঠে আশা রাজপথের কর্মীর হাতেই থাকুক মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদান কারী এশিয়ার প্রাচীণতম রাজনৈতিক দল, কৃষক, শ্রমিক মেহনতী মানুষের আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব। বিগত দিনে বিএনপি-জামাত জোটের জ্বালাও, পুড়াও ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে, উপজেলা আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। আগামী দিনে ভোটের মাঠ ও রাজপথ দখলে রাখতে, কর্মী বান্ধব ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, ক্ষুধা, দারিদ্র মুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যাঁরা কাজ করবেন, তৃণমূল আওয়ামীলীগ ও মাঠে পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য এমন নেতৃত্বই আগামী কমিটিতে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের চাওয়া। উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, বিএনপির এটো থালার বিড়াল বা বিতর্কিত কোন ব্যক্তির নেতৃত্ব চায়না তৃণমুলের নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করার পূর্বে বিগত নির্বাচন গুলিতে কোন নেতার কি ভূমিকা ছিলো তা অনুসন্ধান ও মূল্যায়ন করা হোক। তারা বলেন, টানা ২৩ বছর এই আসনটি আওয়ামীলীগের বাইরে চলে যায়। পরবর্তীতে গত ১৯৯৬ সনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন প্রয়াত অধ্যাপক ডা: এম আমান উল্লাহ। টানা চারবার বিজয়ের ধারাবাহিকতায় ভালুকা পরিণত হয় আওয়ামীলীগের ঘাটিতে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ এর ছেলে আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা বলেন, বর্তমান কমিটির সফলতা যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে। তারা মনে করেন, টানা পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে বিজয় অর্জন যেমন এই কমিটির সফলতা তেমনি প্রায় ২০ বছরে কাউন্সিল না হওয়াটা এই কমিটির ব্যর্থতা। এনিয়ে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশাও আছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান ঝিমিয়ে পড়া অবস্থা আরো স্থায়ী হলে অথবা এই মুহুর্তে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নেতা নির্বাচনে ভূল হলে আগামী নির্বাচনে দলকে এর মাশুল দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। স্থগিত হওয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন, মরহুম মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এর ছেলে, সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য দানবীর খ্যাত এম এ ওয়াহেদ ও বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড শওকত আলী। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন, একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষা সৈনিক সাবেক এমপি মোস্তফা এম এ মতিনের মেয়ে, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি, ভালুকা উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ.বি.এম আফরোজ খান আরিফ, উপজেলা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, পৌর মেয়র, ডা: মেজবাহ্ উদ্দিন কাইয়ূম, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদক হাজ্বী রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ওমর হায়াত খান নঈম, উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন, ভালুকা উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু ও সাবেক ছাত্রনেতা মামুন শাহ সিদ্দিকী। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এক মাত্র প্রার্থী ছিলেন বীর মুক্তযোদ্ধার সন্তান সাদিকুর রহমান তালুকদার।

অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম খান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশ ও দলের প্রতিটি সীদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অবিচল, বিগত প্রতিটি নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের লক্ষে যাদের ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও আপোষহীন, যাদের কাছে আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতা-কর্মীরা মূল্যায়িত হবেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এমন নেতৃত্বই আমাদের প্রত্যাশা।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ.বি.এম আফরোজখান আরিফ বলেন, ২০২৩ সাল উনśয়ন ও নির্বাচনের বছর। চলমান উনśয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দায়িত্বশীল ভুমিকা রাখতে পারবে, ত্যাগী ও দুঃসময়ের পরীক্ষিত ব্যক্তিদেরকেই নেতা নির্বাচিত করা হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি হবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সবেক সদস্য আলহাজ্ব এম এ ওয়াহেদ বলেন, দীর্ঘ সময় দলের কাউন্সিল না হওয়ায় তৃণমুল নেতা-কর্মীদের মাঝে কিছুটা হাতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তবে, কমিটি গঠনের পর নতুন নেতৃত্বে পূণর্গঠিত দল আবার ঐক্যবদ্ধ, গতিশীল ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে ইনশাল্লাহ।
ভালুকা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, দল সাংগঠনিক নিয়মতান্ত্রীক ভাবেই পরিচারিত হয়ে আসছে। স্থগিত হওয়া সম্মেলন কবে হবে, সম্মেলন নাকি কমিটি এটি কেন্দ্র বলতে পারবে। অন্য এক প্রশেśর জবাবে তিনি বলেন, তৃণমুল নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক আছে এমন নেতৃত্বই আগামী কমিটিতে আশা করছি।
আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু এমপি বলেন, দীর্ঘ সময় দলের কাউন্সিল না হওয়ায় তৃণমুল নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হাতাশা সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মিত কাউন্সিল হলে দল শক্তিশালী হয় এবং নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসে। ২০ বছরে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। অপর এক প্রশেśর জবাবে তিনি বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব আমি আশা করছি, যাদের নেতৃত্বে দলে গতিশীলতা আসবে এবং আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দলের বিজয়ের লক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করে দ্রæত সময়ের মধ্যেই কমিটি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, তবে সম্মেলন নাকি কমিটি এটি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটির অন্যতম সদস্য শ্রী অসিম কুমার উকিল এমপি বলেন, ময়মনসিংহ জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর জেলা কমিটির মিটিংএ ভালুকা উপজেলা কমিটি নিয়ে আলোচনা করে সীদ্ধান্ত নেয়া হবে।

দয়াকরে নিউজটি শেয়ার করুন

আরো পড়ুন.....

greenaronno.com

themes052459
© All rights reserved © 2018 মুক্তকণ্ঠ
Theme Download From Bangla Webs