ময়মনসিংহ ০৩:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বাহারি ইফতারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

দৈনিক মুক্তকণ্ঠ
  • আপলোড সময়: ১১:৫৮:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০২৩
  • / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে

খলিলুর রহমানঃ-  ময়মনসিংহের ভালুকায় বাহারি ইফতারীর পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। রোজার প্রায় মাঝা-মাঝি এসেও বেচা-কেনা বেশ ভালই। সিডস্টোর বাজার, মাস্টারবাড়ীসহ উপজেলা সদরের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে পোড়া তেলে ভাজা মুখরোচক এসব বাহারি ইফতারে ধূলুবালি মিশে একাকার। দিনভর রোজা রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে ইফতারীর জন্য এসবই কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন রোজাদাররা। এসব খাবার দেখে জনস্বাস্থ্যবিদরা আতকে উঠলেও আমরা বেশ মজাকরেই খাচ্ছি। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বাহারি ইফতারির নামে আমরা যা খাচ্ছি এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা। মাত্রারিক্ত পোড়া তেল ব্যবহার বন্ধ করার তাগিদও দেন তারা। দিনভর রোজা রেখে ইফতারিতে তেলেভাজা বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বুন্দিয়া, জিলাপির মতো মুখরোচক খাদ্য গ্রহণ একদিকে দেশে সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে অপরদিকে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে তৈরি ভাজাপোড়ার মচমচে আইটেম অধিকাংশ মানুষের ইফতারির অংশ হয়ে উঠছে। মুখরোচক বাহারি পদের খাবারের বেশিরভাগই পোড়া তেলে ভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা মুক্তকণ্ঠকে বলেন, সারা দিন রোজা রেখে অস্বাস্থ্যকর তেলেভাজা ইফতারি হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্তসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে একই তেল দিনের পর দিন ব্যবহার করে তৈরি খাবার নিয়মিত গ্রহণে ফ্যাটি লিভার থেকে শুরু করে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই রোজার মাসে ইফতারিতে এসব খাবার পরিহার করে ফলমূল জাতীয় সুষম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেন, ভাজাপোড়া খাবার তৈরিতে একই তেল বারবার ব্যববহার করা হয়। অতিরিক্ত তাপে ভাজা হলে স্মোক পয়েন্ট বেশি হয়। তখন সেটি র‌্যানসিট তথা হাইড্রোজেনেটেড অয়েলে পরিণিত হয়ে তেলের স্বাভাবিক গঠন ভেঙে যায়। যার আরেক নাম ট্রান্সফ্যাট। ট্রান্সফ্যাটের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি।

ভালুকা উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র মেডিকেল অফিসার ও সহকারী সার্জন ডাঃ রোকাইয়া আক্তার মুক্তকণ্ঠকে বলেন, গর্ভবতি মায়েদেরে জন্য পোড়া তেলে ভাজা কোন প্রকার খাদ্য না খাওয়াই ভাল। এসব খাবারে হজম প্রক্রিয়ায় দেরি ও ক্ষুধামন্দা ˆতরি হয়, ফলে পেটে ব্যথা ও ভমি হতে পারে। ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন মুক্তকণ্ঠকে বলেন, ভাজাপোড়ার খাবারে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। বিশেষ করে কিডনিরোগ ও পাকস্থলীর কেন্সার হয়। তিনি বলেন, একই তেল বারবার গরম করে ভাজাপোড়া খাদ্য তৈরি করে খাওয়ার ফলে হজমে গোলযোগ দেখা দেয়। অতিরিক্ত ফুটানোর ফলে তেলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এগুলোর পরিবর্তে ইফতারের সময় শরবত, পানি, টক দই, দুধ, চিড়া, কলা, ছাতু ও যব দিয়ে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উত্তম। পাশাপাশি দেশি ফলমূল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি ও তরমুজ খাওয়া উচিত। এছাড়া প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পরিমিত মাছ, মুরগি, ডিম দিয়ে তেরি খাবার খাওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যে কোনো ধরনের তৈলাক্ত খাবার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির কারণ। যাদের পরিপাকতন্ত্র ও লিভারের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। একই তেল নিয়মিতভাবে উত্তপ্ত বা ভাজার ফলে সেটির কিছু রাসায়নিক গুণগত পরিবর্তন হয়। যেটিতে তৈরি খাবার লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে। ফ্যাটি লিভার তৈরি হতে পারে। এছাড়া একই তেলে বারবার ভাজা খাদ্য গ্রহণে ক্যানসার সৃষ্টি হতে পারে। হজম প্রক্রিয়ায় দেরি ও ক্ষুধামন্দা তৈরি হয়। তাছাড়া যেকোনো খাবারই হজম হওয়ার পর প্রথমে লিভারের মধ্য দিয়ে শরীরে রক্তে যায়। তাই সারা দিন অভুক্ত থাকার পর অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তা পাকস্থলীর পরিপাক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে। এমন খাবার খেলে প্রথমত হজমের সমস্যা হয়। পরে কোলেস্টেরল লেভেল, ব্লাড সুগার লেভেলের কন্ট্রোল ঠিক থাকে না। এজন্য ভাজাপোড়া কম খেয়ে শাকসবজি, চিড়ামুড়ি, দই এ ধরনের খাবার বেশি খাওয়া উচিত। এগুলো হজমের জন্য ভালো, আবার কোলেস্টেরল, সুগার লেভেলও ভালো রাখে। জনস্বাস্থ্যবিদরা আরও জানান, ফাস্ট ফুড শপ বা রেস্টুরেন্টের ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও চিনিযুক্ত পানীয়তে উচ্চমাত্রায় লবণ ও ক্ষতিকর এসিড থাকে। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই ইফতারিতে ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সহজে হজম হয় এমন খাদ্য খেতে হবে। এক্ষত্রে খিচুড়ি, চিড়া, ভাত, শরবত, খেজুর, ফলমূল জাতীয় খাদ্য উপাদান খাওয়ার পরামর্শ দেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

ট্যাগস :

Please Share This Post in Your Social Media

About Author Information

হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বাহারি ইফতারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

আপলোড সময়: ১১:৫৮:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০২৩

খলিলুর রহমানঃ-  ময়মনসিংহের ভালুকায় বাহারি ইফতারীর পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। রোজার প্রায় মাঝা-মাঝি এসেও বেচা-কেনা বেশ ভালই। সিডস্টোর বাজার, মাস্টারবাড়ীসহ উপজেলা সদরের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে পোড়া তেলে ভাজা মুখরোচক এসব বাহারি ইফতারে ধূলুবালি মিশে একাকার। দিনভর রোজা রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে ইফতারীর জন্য এসবই কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন রোজাদাররা। এসব খাবার দেখে জনস্বাস্থ্যবিদরা আতকে উঠলেও আমরা বেশ মজাকরেই খাচ্ছি। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বাহারি ইফতারির নামে আমরা যা খাচ্ছি এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা। মাত্রারিক্ত পোড়া তেল ব্যবহার বন্ধ করার তাগিদও দেন তারা। দিনভর রোজা রেখে ইফতারিতে তেলেভাজা বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বুন্দিয়া, জিলাপির মতো মুখরোচক খাদ্য গ্রহণ একদিকে দেশে সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে অপরদিকে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে তৈরি ভাজাপোড়ার মচমচে আইটেম অধিকাংশ মানুষের ইফতারির অংশ হয়ে উঠছে। মুখরোচক বাহারি পদের খাবারের বেশিরভাগই পোড়া তেলে ভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা মুক্তকণ্ঠকে বলেন, সারা দিন রোজা রেখে অস্বাস্থ্যকর তেলেভাজা ইফতারি হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্তসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে একই তেল দিনের পর দিন ব্যবহার করে তৈরি খাবার নিয়মিত গ্রহণে ফ্যাটি লিভার থেকে শুরু করে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই রোজার মাসে ইফতারিতে এসব খাবার পরিহার করে ফলমূল জাতীয় সুষম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেন, ভাজাপোড়া খাবার তৈরিতে একই তেল বারবার ব্যববহার করা হয়। অতিরিক্ত তাপে ভাজা হলে স্মোক পয়েন্ট বেশি হয়। তখন সেটি র‌্যানসিট তথা হাইড্রোজেনেটেড অয়েলে পরিণিত হয়ে তেলের স্বাভাবিক গঠন ভেঙে যায়। যার আরেক নাম ট্রান্সফ্যাট। ট্রান্সফ্যাটের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি।

ভালুকা উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র মেডিকেল অফিসার ও সহকারী সার্জন ডাঃ রোকাইয়া আক্তার মুক্তকণ্ঠকে বলেন, গর্ভবতি মায়েদেরে জন্য পোড়া তেলে ভাজা কোন প্রকার খাদ্য না খাওয়াই ভাল। এসব খাবারে হজম প্রক্রিয়ায় দেরি ও ক্ষুধামন্দা ˆতরি হয়, ফলে পেটে ব্যথা ও ভমি হতে পারে। ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন মুক্তকণ্ঠকে বলেন, ভাজাপোড়ার খাবারে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। বিশেষ করে কিডনিরোগ ও পাকস্থলীর কেন্সার হয়। তিনি বলেন, একই তেল বারবার গরম করে ভাজাপোড়া খাদ্য তৈরি করে খাওয়ার ফলে হজমে গোলযোগ দেখা দেয়। অতিরিক্ত ফুটানোর ফলে তেলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এগুলোর পরিবর্তে ইফতারের সময় শরবত, পানি, টক দই, দুধ, চিড়া, কলা, ছাতু ও যব দিয়ে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উত্তম। পাশাপাশি দেশি ফলমূল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি ও তরমুজ খাওয়া উচিত। এছাড়া প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পরিমিত মাছ, মুরগি, ডিম দিয়ে তেরি খাবার খাওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যে কোনো ধরনের তৈলাক্ত খাবার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির কারণ। যাদের পরিপাকতন্ত্র ও লিভারের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। একই তেল নিয়মিতভাবে উত্তপ্ত বা ভাজার ফলে সেটির কিছু রাসায়নিক গুণগত পরিবর্তন হয়। যেটিতে তৈরি খাবার লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে। ফ্যাটি লিভার তৈরি হতে পারে। এছাড়া একই তেলে বারবার ভাজা খাদ্য গ্রহণে ক্যানসার সৃষ্টি হতে পারে। হজম প্রক্রিয়ায় দেরি ও ক্ষুধামন্দা তৈরি হয়। তাছাড়া যেকোনো খাবারই হজম হওয়ার পর প্রথমে লিভারের মধ্য দিয়ে শরীরে রক্তে যায়। তাই সারা দিন অভুক্ত থাকার পর অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তা পাকস্থলীর পরিপাক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে। এমন খাবার খেলে প্রথমত হজমের সমস্যা হয়। পরে কোলেস্টেরল লেভেল, ব্লাড সুগার লেভেলের কন্ট্রোল ঠিক থাকে না। এজন্য ভাজাপোড়া কম খেয়ে শাকসবজি, চিড়ামুড়ি, দই এ ধরনের খাবার বেশি খাওয়া উচিত। এগুলো হজমের জন্য ভালো, আবার কোলেস্টেরল, সুগার লেভেলও ভালো রাখে। জনস্বাস্থ্যবিদরা আরও জানান, ফাস্ট ফুড শপ বা রেস্টুরেন্টের ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও চিনিযুক্ত পানীয়তে উচ্চমাত্রায় লবণ ও ক্ষতিকর এসিড থাকে। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই ইফতারিতে ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সহজে হজম হয় এমন খাদ্য খেতে হবে। এক্ষত্রে খিচুড়ি, চিড়া, ভাত, শরবত, খেজুর, ফলমূল জাতীয় খাদ্য উপাদান খাওয়ার পরামর্শ দেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।