১৫ মার্চ: কৃষকের রক্ত ঝরার দিন
- আপলোড সময়: ০৯:২৫:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩
- / ৬৭৬ বার পড়া হয়েছে
আতিকুল ইসলাম জাকারিয়াঃ- সাধারন সম্পাদক বাংলাদেশ কৃষক লীগ ভালুকা উপজেলা শাখা, ময়মনসিংহ। মানব সভ্যতার সূচনা কৃষি থেকে। কথায় আছে ‘কৃষিই কৃষ্টি’। তাইতো কৃষি আদৃত হয় সকল কৃষ্টি আর সভ্যতার জননীরুপে। দেশী- বিদেশী সকল বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকগণ এই বিষয়ে একমত যে, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের সাথে জীবিকার গতি সচল রাখতে কৃষিই একমাত্র অবলম্বন। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে কৃষি যেমনি মানুষের ক্ষুধা নিবারণ তথা জীবিকা নির্বাহের বাহন ছিল- তেমনি আজকের দিনেও কৃষিই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার বাহন। আর কৃষক হলো তার মূল কারিগর। তাইতো নি:সন্দেহে বলা যায়-‘কৃষক হলো জাতির মেরুদন্ড’।
অথচ এই কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে কৃষকের রক্ত ঝরেছে। যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের খাদ্যের যোগান দেয় -সে কৃষককে রক্ত দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সে এক কালো অধ্যায়। ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন বিএনপি- জামাত জোট সরকারের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী সার, তেল, কীটনাশক ও কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত ১৮ জন কৃষককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
কালোবাজারির মাধ্যমে সার বিক্রির অপপ্রয়াসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কুপুত্র তারেক রহমান ও তার সহযোগিদের দ্বারা গঠিত হয় এক জঘন্যতম সিন্ডিকেট। কৃষকের রক্ত চুষা এই সিন্ডিকেট সারাদেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে। দেখা দেয় তীব্র সার সংকট । কৃষি খাতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ফসল উৎপাদন একেবারে কমে যায়। ফলশ্রæতিতে তখন তিন থেকে চার কোটি প্রান্তিক কৃষক অনাহারে- অর্ধাহারে থাকতে বাধ্য হয়। তারা নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়ে।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয়- তাইতো কৃষকরা রাস্তায় নেমে আসে। বেঁচে থাকার তাগিদে শুরু করে সারের দাবিতে আন্দোলন। আর লুটেরা-দুর্নীতিবাজ বিএনপি-জামাত জোট সরকার কৃষককে সারের পরিবর্তে বুলেট বৃষ্টি উপহার দেয় । বাংলার জমিন কৃষকের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়। বিএনপি-জামাতের মদদপুষ্ট লুটেরা বাহিনী চরম বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা থেকে লাখ লাখ বস্তা সার লুট করে নেয়। এমনকি লুটের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তখন অভ্যন্তরীন দ্বন্ধে ছাত্রদলের এক নেতাও নিহত হয়।
সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা ও লুটপাটের কারনে এদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি কৃষিখাত ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একটা বক্তব্যে সেই অদক্ষতার চিত্র ফুটে উঠে। তিনি তখন বলেছিলেন, দেশে খাদ্য ঘাটতি থাকা ভালো। তা না হলে বিদেশ থেকে ভিক্ষা আসবে না। এরকম নেতিবাচক মানসিকতা নিয়েই তারা সরকার পরিচালনা করেছে।
অথচ আজকের দিনে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন সমগ্র বিশ্বে রোল মডেলে পরিনত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষক রতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষি অবকাঠামো ঢেলে সাজানো হয়েছে। সরকার গৃহীত কৃষিবান্ধব নীতিমালা প্রনয়ন ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষিতে যুগান্তকারী উন্নয়ন সূচিত হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্ন কৃষি কর্মসূচিতে ৭৪ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩১৩ জন কৃষকের মধ্যে ৮২৭.১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা বিতরণ করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে কৃষকদের সাশ্রয়ী মূল্যে সার ও হাইব্রিড বীজ দিতে ২০২১ সালেই প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। কৃষি উপকরণ সহায়তার জন্য ২ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪ জন কৃষককে ‘স্মার্ট কার্ড’ দেয়া হয়েছে। কৃষকরা এখন কৃষি কাজের জন্য সুদ মুক্ত ও স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা পাচ্ছে। কৃষি পুনর্বাসন ও কৃষি প্রনোদনা কার্যক্রমের আওতায় বিনামূল্যে বিভিন্ন ফসলের বীজ ও রাসায়নিক সার সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। সারে দেওয়া হয়েছে পরিমিত ভর্তুকি । ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের দাম প্রতি কেজিতে ৯ টাকা করে কমিয়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২৫ টাকা থেকে ১৬ টাকা হয়েছে।
যে সারের জন্য একসময় কৃষকরা হাহাকার করেছে, আন্দোলন করেছে ও বুকের রক্ত ঝরিয়েছে- সেই সার আজকে অনায়াসে কৃষকের দ্বোরগোরায় পৌঁছে যাচ্ছে। সারা দেশে আজ কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার সত্যিকার অর্থেই কৃষকবান্ধব সরকার।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ সারের জন্য আত্মাহুতি দানকারী ১৮ জন কৃষকের স্মৃতি ধরে রাখার প্রয়াসে এ দিনটিকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘কৃষক হত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষনা করে। সেই থেকে বাংলাদেশ কৃষক লীগ প্রতি বছর এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।