ময়মনসিংহ ১২:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বানিজ্যিক ভাবে সফলতার মুখ দেখছে ভালুকার কুমির খামার

দৈনিক মুক্তকণ্ঠ
  • আপলোড সময়: ০৯:১৯:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৩২৬ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি:- ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হাতিবের গ্রামে গড়ে উঠা রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামের বানিজ্যিক কুমির খামারটি মালিকানা বদলের কারনে ধ্বসে পরলেও পরবর্তীতে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।

ভালুকার হাতিবের র‌্যাপটাইলস ফার্মহতে হিমায়িত কুমির, চামড়া, রপ্তানী করে কয়েক বছরে আয় করেন কোটি কোটি টাকা। ওই ফার্মে গেলে দেখাযায় বিশেষ ভাবে তৈরী ছোট বড় পুকুরে বিভিন্ন বয়সের কুমির রাখা আছে। কথা হয় ফার্ম ম্যানেজার আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের সাথে। তিনি জানান ২০০৩ সালে ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীর এই হাতিবের গ্রামে আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে ১৩ একর জমির উপর মেজবাউল হক ও মোস্তাক আহম্মেদ র‌্যাপটাইল ফার্ম নামে কুমির খামারটি গড়ে তোলেন। ৪ একর জমির মাটি কেটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কুমিরের বাসউপযোগী ১৪টি পুকুর কেটে তলদেশ পাকা ও ৩ ফুট উঁচু প্রাচীর উপরে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মালেশিয়ার সারওয়াত হতে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৭৫ টি কুমির আমদানী করা হয়। এর মধ্যে ১ টি কুমির আবহাওয়ার তারতম্যের কারনে মারা যায়। ৭৫ টি কুমির দিয়ে শুরু করা ফার্মটি হতে কয়েকবার রপ্তানী করার পরও কুমিরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে ৬৭ টি হিমায়িত কুমির জার্মানে. ২০১৪ হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৫০৭ টি কুমিরের চামড়া জাপানে রপ্তানী প্রায় সারে ৮ কোটি কোটি টাকা আয় হয়। পুরুষ কুমিরের চামড়ার কদর বেশী। এদের বয়স দুই বছর পুর্ণ হলে চামড়া বিক্রয়োপযোগী হয়। মুরগীর মাংসের পাশাপাশি. গরুর মাংস ও মাছ খাবার হিসেবে কুমিরকে দিতে হয়। ফার্মটি গড়ে তোলার শুরুতে ৩৬ শতাংশ মেজবাউল হক, ১৫ শতাংশ মোস্তাক আহম্মেদের ও বাকি ৪৯ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ই ই এফ প্রকল্পের ঋণ নেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ। আর্থিক সংকটের কারনে ফার্ম পরিচালনায় ব্যঘাত ঘটলে ২০১২ সালে সকল শেয়ার কিনে নেন প্রশান্ত কুমার উরফে পিকে হালদার। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর ফার্মের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে বিপুল পরিমান ঋণ গ্রহন করেন। খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে পিকে হালদারের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হলে সংকটে পরে যায় কুমির খামারটি। খাদ্য সংকট ও পরিচর্যার অভাবে ২০২০/২১ সালে এক হাজারের উপরে কুমির মারা যায়। যে কারনে খামারটি ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যে লোকসানে পরে যায়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে গঠন করে দেয়া খামার পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর নব উদ্যমে কাজ শুরু হওয়ায় নতুন করে ঘুরে দাড়িয়েছে কুমির খামারটি। বর্তমানে খামারটির আয়তন দাড়িয়েছে ২১ একর জমির উপর। রপ্তানীযোগ্য ৬০০ কুমির সহ বর্তমানে খামারটিতে ছোটবড় মিলিয়ে ৩০০০ কুমির রয়েছে। রপ্তানীযোগ্য কুমিরগুলি আলাদা শেডে রাখা হয়। র‌্যাপটাইলস ফার্ম ময়মনসিংহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক জানান হাউজ থেকে তুলে এনে কুমিরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলা হয়। ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান হিমায়িত কুমির ও চামড়া রপ্তানী হলেও কুমিরের মাংস,দাঁত রপ্তানির অনুমতি মেলেনি এখনও পর্যন্ত। এসবের অনুমতি পেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে ভালুকার কুমির খামারটি।
প্রায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে পরিবার পরিজন নিয়ে দর্শনার্থীরা কুমির দেখতে ফার্মে এসে ভীড় করেন।

ট্যাগস :

Please Share This Post in Your Social Media

About Author Information

বানিজ্যিক ভাবে সফলতার মুখ দেখছে ভালুকার কুমির খামার

আপলোড সময়: ০৯:১৯:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি:- ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হাতিবের গ্রামে গড়ে উঠা রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামের বানিজ্যিক কুমির খামারটি মালিকানা বদলের কারনে ধ্বসে পরলেও পরবর্তীতে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।

ভালুকার হাতিবের র‌্যাপটাইলস ফার্মহতে হিমায়িত কুমির, চামড়া, রপ্তানী করে কয়েক বছরে আয় করেন কোটি কোটি টাকা। ওই ফার্মে গেলে দেখাযায় বিশেষ ভাবে তৈরী ছোট বড় পুকুরে বিভিন্ন বয়সের কুমির রাখা আছে। কথা হয় ফার্ম ম্যানেজার আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের সাথে। তিনি জানান ২০০৩ সালে ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীর এই হাতিবের গ্রামে আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে ১৩ একর জমির উপর মেজবাউল হক ও মোস্তাক আহম্মেদ র‌্যাপটাইল ফার্ম নামে কুমির খামারটি গড়ে তোলেন। ৪ একর জমির মাটি কেটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কুমিরের বাসউপযোগী ১৪টি পুকুর কেটে তলদেশ পাকা ও ৩ ফুট উঁচু প্রাচীর উপরে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মালেশিয়ার সারওয়াত হতে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৭৫ টি কুমির আমদানী করা হয়। এর মধ্যে ১ টি কুমির আবহাওয়ার তারতম্যের কারনে মারা যায়। ৭৫ টি কুমির দিয়ে শুরু করা ফার্মটি হতে কয়েকবার রপ্তানী করার পরও কুমিরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে ৬৭ টি হিমায়িত কুমির জার্মানে. ২০১৪ হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৫০৭ টি কুমিরের চামড়া জাপানে রপ্তানী প্রায় সারে ৮ কোটি কোটি টাকা আয় হয়। পুরুষ কুমিরের চামড়ার কদর বেশী। এদের বয়স দুই বছর পুর্ণ হলে চামড়া বিক্রয়োপযোগী হয়। মুরগীর মাংসের পাশাপাশি. গরুর মাংস ও মাছ খাবার হিসেবে কুমিরকে দিতে হয়। ফার্মটি গড়ে তোলার শুরুতে ৩৬ শতাংশ মেজবাউল হক, ১৫ শতাংশ মোস্তাক আহম্মেদের ও বাকি ৪৯ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ই ই এফ প্রকল্পের ঋণ নেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ। আর্থিক সংকটের কারনে ফার্ম পরিচালনায় ব্যঘাত ঘটলে ২০১২ সালে সকল শেয়ার কিনে নেন প্রশান্ত কুমার উরফে পিকে হালদার। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর ফার্মের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে বিপুল পরিমান ঋণ গ্রহন করেন। খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে পিকে হালদারের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হলে সংকটে পরে যায় কুমির খামারটি। খাদ্য সংকট ও পরিচর্যার অভাবে ২০২০/২১ সালে এক হাজারের উপরে কুমির মারা যায়। যে কারনে খামারটি ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যে লোকসানে পরে যায়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে গঠন করে দেয়া খামার পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর নব উদ্যমে কাজ শুরু হওয়ায় নতুন করে ঘুরে দাড়িয়েছে কুমির খামারটি। বর্তমানে খামারটির আয়তন দাড়িয়েছে ২১ একর জমির উপর। রপ্তানীযোগ্য ৬০০ কুমির সহ বর্তমানে খামারটিতে ছোটবড় মিলিয়ে ৩০০০ কুমির রয়েছে। রপ্তানীযোগ্য কুমিরগুলি আলাদা শেডে রাখা হয়। র‌্যাপটাইলস ফার্ম ময়মনসিংহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক জানান হাউজ থেকে তুলে এনে কুমিরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলা হয়। ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান হিমায়িত কুমির ও চামড়া রপ্তানী হলেও কুমিরের মাংস,দাঁত রপ্তানির অনুমতি মেলেনি এখনও পর্যন্ত। এসবের অনুমতি পেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে ভালুকার কুমির খামারটি।
প্রায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে পরিবার পরিজন নিয়ে দর্শনার্থীরা কুমির দেখতে ফার্মে এসে ভীড় করেন।