ময়মনসিংহ ১১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ ভালুকা মুক্ত দিবস শ্রদ্ধার সাথে মেজর আফসারকে স্মরণ

দৈনিক মুক্তকণ্ঠ
  • আপলোড সময়: ০৯:৪৩:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ- আজ ৮ই ডিসেম্বর, ভালুকা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে আফসার বাহিনীর অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় ভালুকা শত্রু মুক্ত হয়। আফসার বাহিনীর আক্রমনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ভালুকার ঘাঁটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়, মুক্ত হয় ভালুকা। সেই থেকে এই দিনটিকে ভালুকার মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ ভালুকা মুক্ত দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা মরহুম মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

১৯৭১ সালের ৭ই ডিসেম্বর মধ্যরাতে আফসার বাহিনীর অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ভালুকা সদরে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির তিন দিক থেকে প্রচন্ড আক্রমন শুরু করলে পাকিস্তানী সেনারা এক পর্যায়ে ভালুকার ঘাঁটি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা থানা প্রাঙ্গনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা ঘোষনা সোনার পর থেকে ভালুকা উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু যখন ঘোষনা দিলেন “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” তখন মুক্তিকামী বাঙ্গালী তাঁর কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য শপথ গ্রহন করেন। সারাদেশের ন্যায় ভালুকাতে ও আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে, দেশ প্রেমিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক সহ সর্বস্তরের জনগণের সমন্বয়ে গঠন করা হয় সংগ্রাম পরিষদ। ব্রিটিশ ভারত সেনাবাহিনী (অব:) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আফসার উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে ভালুকার রাজৈ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ মেম্বারের কাছ থেকে একটি মাত্র রাইফেল নিয়ে ও আট জন সদস্য নিয়ে ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের মল্লিকবাড়ী বাজারের খেলু ফকিরের বাড়ীতে মুক্তি বাহিনীর একটি গেরিলা দল গঠন করেন। পরবর্তীতে ভালুকা থানা দখল করে ১৪/১৫ টি রাইফেল ও একটি এল, এম, জি সহ প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। এর কয়েক দিনের মাথায় কাউরাইদ হতে খীরু নদী হয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পনাশাইল নামক স্থানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অস্ত্র ও গোলা-বারুদ সহ একটি নৌকা আটক করে মুক্তিযোদ্ধারা। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে গেরিলা একটি দল শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়। মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এর আট সদস্যের একটি দল, পরবর্তীতে প্রায় সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিশাল একটি বাহিনী গড়ে উঠে। এফ জে ১১ নম্বর সেক্টরের ময়মনসিংহ দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে। অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে, আফসার বাহিনী ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল, গফরগাঁও, ভালুকা, সখীপুর, শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর এর একটি অংশ সহ ময়মনসিংহ দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা উত্তর অঞ্চলের একটি বিশাল এলাকা জুরে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। যুদ্ধকালীন সময় আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডা. রমজান আলী তরফদারের তত্ত্বাবধানে পাঁচজন ডাক্তার দশজন সহকারী ও চারজন নার্স এর সমন্বয়ে গড়েতুলা হয় আফসার ব্যাটালিয়ন ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কিছুদিন রেডক্রস সংস্থা দ্বারা আফসার ব্যাটালিয়ন হাসপাতালটি পরিচালিত হয়। ১৯৭১ সালে ২৫ জুন শুক্রবার সকাল হতে ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওয়ালিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পাড়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আফসার বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টা একটানা এই যুদ্ধ স্থায়ী হয়। যেটি আমাদের কাছে ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধ নামেই পরিচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে হানাদার বাহিনী চারিদিকে পানি বেষ্টিত নদীর পূর্বপারে গোয়ারী যোগীপাড়া নামক স্থানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। শুক্রবার সারাদিন ও সারারাত তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে অনেক পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়। পরদিন শনিবার (২৬ জুন) সকাল ১১টার দিকে ঢাকা হতে আকাশ পথে আসা হানাদার বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ করে ভারি মেশিন গানের সেলিং শুরু করে। এসময় মুক্তিযোদ্ধারাও হেলিকপ্টার লক্ষ করে পাল্টা এল এম জির সাহায্যে গোলা বর্ষণ অব্যাহত রাখলে হেলিকপ্টার পিছু হটে। এরপর শনিবার সন্ধ্যার দিকে যুদ্ধক্ষেত্রের ৪ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ধলিয়া গ্রামে ধলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার থেকে পাকিস্তানী সেনা নামিয়ে দিলে মুক্তিযোদ্ধারা ডিফেন্স ছেড়ে চলে আসে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পশ্চিম দিকে একটানা দুইদিন সম্মুখ যুদ্ধ করায় পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়। এই যুদ্ধে আফসার বাহিনীর তরুণ যোদ্ধা ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিকবাড়ী বাজারের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল মান্নানের মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। এ সময় মজিবর রহমানসহ আরও পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে অনেক পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়। ১৯৭১ ঐতিহাসিক ওই যুদ্ধের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল-ইন্ডিয়া রেডিও ও বিবিসি হতে ফলাও করে সম্প্রচার করা হয়। এই যুদ্ধের পরে ভালুকা থানা ও বাজার এলাকায় হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয়। মুসলিমলীগ নেতাদের সহযোগীতায় এখানে গড়ে তোলা হয়েছিলো একটি রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প। এসব রাজাকার আলবদররা ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ লুটপাট চালায়। যুদ্ধকালীন সময় একাধিক বার আফসার বাহিনী ভালুকা হানাদার ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়েছে। এছাড়া আমলীতলা যুদ্ধে, বল্লা যুদ্ধ, ত্রিশাল, গফরগাঁও, ফুলবাড়ীয়া, শ্রীপুর, ভালুকার মল্লিকবাড়ী, মেদুয়ারীসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে আফসার বাহিনীর অসংখ্য যুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ৯মাসের যুদ্ধে আফসার উদ্দিন আহমেদ এর পুত্র নাজিম উদ্দিন সহ ৪৭জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে মেজর আফসার পরিবারের ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। যা আমাদের মক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিরল। যতদিন আমাদের ম্বাধীনতা, লাল সবুজের পতাকা ও মানচিত্র থাকবে ততদিন ভালুকা সহ এই অঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষ মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। ভালুকা মুক্ত দিবস উলক্ষে, মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এর সুযোগ্য সন্তান, জাতীয় সংসদ সদস্য, আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু এক বিবৃতিতে, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ সদস্যদের আত্নার শান্তি কামনা করেন। পাশাপাশি মরহুম মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এবং শহীদ নাজিম উদ্দিন সহ সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নার শান্তি কামনা করেন। তিনি, ৩০ লক্ষ শহীদ ২ লক্ষ মা বোনদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

ট্যাগস :

Please Share This Post in Your Social Media

About Author Information

আজ ভালুকা মুক্ত দিবস শ্রদ্ধার সাথে মেজর আফসারকে স্মরণ

আপলোড সময়: ০৯:৪৩:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধিঃ- আজ ৮ই ডিসেম্বর, ভালুকা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে আফসার বাহিনীর অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় ভালুকা শত্রু মুক্ত হয়। আফসার বাহিনীর আক্রমনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ভালুকার ঘাঁটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়, মুক্ত হয় ভালুকা। সেই থেকে এই দিনটিকে ভালুকার মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ ভালুকা মুক্ত দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা মরহুম মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

১৯৭১ সালের ৭ই ডিসেম্বর মধ্যরাতে আফসার বাহিনীর অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ভালুকা সদরে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির তিন দিক থেকে প্রচন্ড আক্রমন শুরু করলে পাকিস্তানী সেনারা এক পর্যায়ে ভালুকার ঘাঁটি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা থানা প্রাঙ্গনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা ঘোষনা সোনার পর থেকে ভালুকা উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু যখন ঘোষনা দিলেন “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” তখন মুক্তিকামী বাঙ্গালী তাঁর কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য শপথ গ্রহন করেন। সারাদেশের ন্যায় ভালুকাতে ও আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে, দেশ প্রেমিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক সহ সর্বস্তরের জনগণের সমন্বয়ে গঠন করা হয় সংগ্রাম পরিষদ। ব্রিটিশ ভারত সেনাবাহিনী (অব:) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আফসার উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে ভালুকার রাজৈ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ মেম্বারের কাছ থেকে একটি মাত্র রাইফেল নিয়ে ও আট জন সদস্য নিয়ে ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের মল্লিকবাড়ী বাজারের খেলু ফকিরের বাড়ীতে মুক্তি বাহিনীর একটি গেরিলা দল গঠন করেন। পরবর্তীতে ভালুকা থানা দখল করে ১৪/১৫ টি রাইফেল ও একটি এল, এম, জি সহ প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। এর কয়েক দিনের মাথায় কাউরাইদ হতে খীরু নদী হয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পনাশাইল নামক স্থানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অস্ত্র ও গোলা-বারুদ সহ একটি নৌকা আটক করে মুক্তিযোদ্ধারা। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে গেরিলা একটি দল শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়। মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এর আট সদস্যের একটি দল, পরবর্তীতে প্রায় সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিশাল একটি বাহিনী গড়ে উঠে। এফ জে ১১ নম্বর সেক্টরের ময়মনসিংহ দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে। অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে, আফসার বাহিনী ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল, গফরগাঁও, ভালুকা, সখীপুর, শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর এর একটি অংশ সহ ময়মনসিংহ দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা উত্তর অঞ্চলের একটি বিশাল এলাকা জুরে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। যুদ্ধকালীন সময় আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডা. রমজান আলী তরফদারের তত্ত্বাবধানে পাঁচজন ডাক্তার দশজন সহকারী ও চারজন নার্স এর সমন্বয়ে গড়েতুলা হয় আফসার ব্যাটালিয়ন ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কিছুদিন রেডক্রস সংস্থা দ্বারা আফসার ব্যাটালিয়ন হাসপাতালটি পরিচালিত হয়। ১৯৭১ সালে ২৫ জুন শুক্রবার সকাল হতে ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওয়ালিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পাড়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আফসার বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টা একটানা এই যুদ্ধ স্থায়ী হয়। যেটি আমাদের কাছে ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধ নামেই পরিচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে হানাদার বাহিনী চারিদিকে পানি বেষ্টিত নদীর পূর্বপারে গোয়ারী যোগীপাড়া নামক স্থানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। শুক্রবার সারাদিন ও সারারাত তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে অনেক পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়। পরদিন শনিবার (২৬ জুন) সকাল ১১টার দিকে ঢাকা হতে আকাশ পথে আসা হানাদার বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ করে ভারি মেশিন গানের সেলিং শুরু করে। এসময় মুক্তিযোদ্ধারাও হেলিকপ্টার লক্ষ করে পাল্টা এল এম জির সাহায্যে গোলা বর্ষণ অব্যাহত রাখলে হেলিকপ্টার পিছু হটে। এরপর শনিবার সন্ধ্যার দিকে যুদ্ধক্ষেত্রের ৪ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ধলিয়া গ্রামে ধলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার থেকে পাকিস্তানী সেনা নামিয়ে দিলে মুক্তিযোদ্ধারা ডিফেন্স ছেড়ে চলে আসে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পশ্চিম দিকে একটানা দুইদিন সম্মুখ যুদ্ধ করায় পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়। এই যুদ্ধে আফসার বাহিনীর তরুণ যোদ্ধা ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিকবাড়ী বাজারের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল মান্নানের মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। এ সময় মজিবর রহমানসহ আরও পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে অনেক পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়। ১৯৭১ ঐতিহাসিক ওই যুদ্ধের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল-ইন্ডিয়া রেডিও ও বিবিসি হতে ফলাও করে সম্প্রচার করা হয়। এই যুদ্ধের পরে ভালুকা থানা ও বাজার এলাকায় হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয়। মুসলিমলীগ নেতাদের সহযোগীতায় এখানে গড়ে তোলা হয়েছিলো একটি রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প। এসব রাজাকার আলবদররা ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ লুটপাট চালায়। যুদ্ধকালীন সময় একাধিক বার আফসার বাহিনী ভালুকা হানাদার ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়েছে। এছাড়া আমলীতলা যুদ্ধে, বল্লা যুদ্ধ, ত্রিশাল, গফরগাঁও, ফুলবাড়ীয়া, শ্রীপুর, ভালুকার মল্লিকবাড়ী, মেদুয়ারীসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে আফসার বাহিনীর অসংখ্য যুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ৯মাসের যুদ্ধে আফসার উদ্দিন আহমেদ এর পুত্র নাজিম উদ্দিন সহ ৪৭জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে মেজর আফসার পরিবারের ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। যা আমাদের মক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিরল। যতদিন আমাদের ম্বাধীনতা, লাল সবুজের পতাকা ও মানচিত্র থাকবে ততদিন ভালুকা সহ এই অঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষ মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। ভালুকা মুক্ত দিবস উলক্ষে, মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এর সুযোগ্য সন্তান, জাতীয় সংসদ সদস্য, আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু এক বিবৃতিতে, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ সদস্যদের আত্নার শান্তি কামনা করেন। পাশাপাশি মরহুম মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ এবং শহীদ নাজিম উদ্দিন সহ সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নার শান্তি কামনা করেন। তিনি, ৩০ লক্ষ শহীদ ২ লক্ষ মা বোনদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।