আরিফ বিল্লাহ জামিল,বারহাট্টা থেকেঃ- “কাশবনে এক কন্যে, তুলছে কাশের ময়ূর-চূড়াকালো খোঁপার জন্যে।”
কবির লিখা- ‘কাশবনে এক কন্যে’ কবিতার লাইন সমুহতে মেয়ের সৌন্দর্যের সাথে তুলনায় কবির নিজের গাঁয়ের প্রকৃতির কিছুটা স্নিগ্ধতার ছোঁয়া পাওয়া যায়।
কবির গ্রামটি বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রামের মতই সবুজ শ্যামল, শান্ত, কোলাহলমুক্ত। কাশবনে দেখা মিলবে, কবির শৈশব কাটানো ছোট্ট গাঁয়ের কিছু খন্ড চিত্র। নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলায় অবস্থিত কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মভূমি কাশবন গ্রামে। কাশবন নামের পেছনেও ছোট্ট একটি গল্প জড়িয়ে আছে, যা কবির লিখা থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারি-কবির ভাষায়, “আমার একটি ছোট্ট সুন্দর গ্রাম ছিল, তার নামটিও ছিল ভারী সুন্দর “কাশতলা” হয়তো এক সময় কাশফুলের খুব প্রাচুর্য ছিল ঐ গ্রামে। আমি কবিত্ব করে, তার নাম পাল্টে রেখেছিলাম “কাশবন”। ভালোবেসে প্রেমিক যেমন তার প্রেমিকার নাম পাল্টে রাখে, সে-ই আমার প্রথম কবিতা।”
গ্রামের বুক ছিঁড়ে বয়ে গেছে, আঁকা-বাঁকা পিচঢালা পথ। পথের, দু’পাশ সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো। কৃষকের ঘাম ঝড়ানো কষ্টে বুনা ফসলের সবুজ মাঠ। পথে চলতে চলতে রাস্তার পাশে শূর তুলে স্বাগত জানাবে, কবির ইচ্ছায় নির্মিত একটি ছোট্ট হাতির প্রতিমূর্তি।
কিছু দূর এগিয়ে গেলে কবির বাড়ির মুল ফটক। বাড়ির মূল ভিটায় টিনশেডের পুরাতন বসতঘর (যে, ঘরে কবি বাড়ী গেলে থাকেন) বাড়ির সামনে কবির ঠাকুর’দার নামে রয়েছে রামসুন্দর পাঠাগার। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সংগ্রহশালা।
পাঠাগারের সামনে, কবির নিজ উদ্যোগে গড়া শানবাঁধানো ঘাটসহ খনন করা সুখেন্দু সরোবর এবং বাড়ির পিছন দিকে কামিনী সরোবর নামে দুটি স্বচ্ছ পানির পুকুর। পুকুর পাড়ে গাছের ছায়ায় বসার জন্য রয়েছে দুলনা ও পাকা বেঞ্চ। যেগুলোতে বিকেলবেলা বসে স্থিরমনে গ্রামের মাঠগুলো এবং মানুষজনের আনাগোনা দেখা যায়। হাতে খাতাকলম নিয়ে ইচ্ছে করলে লেখালেখিতেও বসে পড়তে বাধা নেই।
বাড়ির আঙিনায় চারপাশে আছে সুপারি, আম, নারকেলসহ বিভিন্ন গাছ। রয়েছে, মাইকেল মধুসূদন, ও রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য। বসত ঘরের সামনেই রয়েছে কবির প্রিয় মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। যাতে লিখা রয়েছে, বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী শ্রেষ্ঠ ভাষন। রয়েছে শ্বেত পাথরে নির্মিত শহীদবেদি। শহিদবেদির গায়ে লিখা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর একুশের গান “আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি”।
বাড়ির আঙিনায় রয়েছে জন্মদাত্রী মা ও পালিত মায়ের নামকরণে করা বীনাপানি-চারুবালা সংগ্রহশালা- এটি মার্বেল পাথর আর পোড়ামাটির টাইলস দিয়ে তৈরি। সংগ্রহশালার ভিতরে দেখা মিলবে- বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, কবির পুরস্কারের ক্রেস্ট, সনদ, চিঠি ,উপহারসামগ্রী পরিবারের সদস্যদের নানা স্মৃতি , দেশের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনসহ আরও অনেক কিছু। তাছাড়া আরও দেখা মিলবে, দাদা ও বাবার নামে করা সারদা-বাসুদেব চিত্রশালা। যেখানে গ্রামের ছোট ছেলে-মেয়েরা বিনা পয়সায় শিখছে চিত্র আঁকা। সঙ্গীত শিখার জন্য রয়েছে শৈলজা সঙ্গীত ভবন।
বিভিন্নজাতীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য রয়েছে “বীরবরন মঞ্চ”। বাড়ির মধ্যে রয়েছে কবির ২ (দুই)- মায়ের নামকরণে বীণাপাণি-চারুবালা সংগ্রহশালা- যা, মার্বেল পাথর আর পোড়ামাটির টাইলস দিয়ে তৈরি। সেখানে, দেখা মিলবে বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, কবির পুরস্কারেরক্রেস্ট, সনদ, চিঠি, উপহারসামগ্রী, পরিবারের সদস্যদের নানা স্মৃতি, দেশের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনসহ আরও অনেক কিছু।
কবির বাড়ির পিছন দিকে আদিবাসীদের (হদি সম্প্রদায়) একটি পাড়া রয়েছে, যেখানে সারাদিন জুড়ে বাঁশ-বেতের বিভন্ন জিনিস তৈরি করে।
বাড়ির কিছু দূরে কবির নিজ উদ্দোগে তৈরি করা হয়, “সর্বজনীন শ্মশানঘাট” যেখানে নিজ পরিবার এবং গ্রামের মৃত ব্যক্তিদের সৎকার করা হয় । সেখানেও বই পড়ার ব্যবস্থা রেখেছেন।
রাস্তার পাশেই গ্রামের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার সুবিধার্থে কবির নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত- “কাশবন বিদ্যানিকেতন”। বিদ্যালয়ের সামনেই রয়েছে- কবি নজরুল এবং স্যার আইজ্যাক নিউটন ও জগদীশ চন্দ্র বসুর ভাস্কর্য। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান চর্চার জন্য তৈরি করেছেন, “জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবন”।
কিভাবে আসবেন প্রিয় কবির গ্রামে:-
ঢাকা থেকে ৩টি ট্রেন সরাসরি বারহাট্টা আসে। হাওর এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস এবং মহুয়া কমিউটর। ইচ্ছে করলে দিন এসে দিযাওয়া যায় ।
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে বারহাট্টা স্টেশনে এসে নামতে হবে ভাড়া ১৭০ থেকে ৮০০টাকা। তাছাড়া বাসেও আসা যায়, বাসে আসলে নেত্রকোনা নামতে হবে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে শাহজালাল পরিবহনে করে সরাসরি আসা যাবে নেত্রকোনা ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকা সেখান থেকে বারহাট্টা বাসে করে বা সিএনজি করে আসা যাবে ভাড়া পড়বে ৫০-৬০টাকা। তারপর বারহাট্টা থেকে রিক্সা বা অটো করে সরাসরি কাশবন কবির বাড়িতে ভাড়া ৩০-৪০ টাকা