মোহাম্মদ সেলিম,ত্রিশাল থেকেঃ- ময়মনসিংহে ত্রিশালে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ নাছরীন সুলতানা নিজ অফিসে প্রকাশ্যে দরকষাকষি করে ঘুষ নিচ্ছিলেন। সম্প্রতি বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে ঘুষের টাকা লেনদেনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভূক্তভোগীরা পোষ্ট করলে তা ভাইরাল হয়। ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও ক্লিপও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘটনার পরদিন ঐ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ভিডিওতে তিনি বলেন,সামনাসামনি যা করছেন আপনি তো আমার চাকরি খাবেন, এই শোনেন, যেটা দেখাইছি ওইটা দিতে হবে, তাহলে আপনি কাজ পেয়ে যাবেন। ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা টাকা দিলে এটা অয়না। তারপরও দিয়ে গেলেন! ওই ভাই সামনে ছিল, (পাশে বসে কথা বলতে থাকা এক ব্যক্তিকে দেখিয়ে) তাই আমি রাখলাম, নাইলে রাখতাম না। কিন্তু দেওয়া লাগব, ওইটা না দিলে আপনার খারিজ (নামজারি) হবে না। জানাযায়, ত্রিশাল উপজেলার কানিহারী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাছরীন সুলতানা তাঁর অফিসে নামজারি করতে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে টাকার বিনিময়ে কাজ করে দেওয়ার জন্য দর-কষাকষি করছেন।একপর্যায়ে হাসি ভরা মুখে টাকা হাতে নিতে নিতে তাঁকে বলতে শোনা যায় ‘আপনি তো আমার চাকরি খাবেন। সামনাসামনি যা করছেন!’ একহাতে টাকা নাড়তে নাড়তে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাছরীন সুলতানা হাসিমুখে বলতে থাকেন ‘আমার চাকরিটা খাওয়ার জন্য আপনি লাগছেন! এই শোনেন, যেটা দেখাইছি ওইটা দিতে হবে, তাহলে আপনি কাজ পেয়ে যাবেন। দুই দিন পরে বাকি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই ব্যক্তি দুটি নামজারির জন্য ১৬ হাজার টাকা দেবেন জানালে আবার ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘না এইতো অইতনা, এইতা বাংলা আলাপ কইরেন না। নামজারি করতে আসা ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনে আরও দেখা যায়, ওই ভূমি কর্মকর্তা ইশারা ইঙ্গিতে টাকার পরিমাণ বোঝানোর চেষ্টা করছেন। নামজারি করতে যে টাকা দাবি করছেন, সেটি ক্যালকুলেটরে লিখে ওই ব্যক্তিকে দেখান এবং বলেন এটা লাগবে। সম্পূর্ণ কথোপকথন থেকে জানা যায়, দুটি নামজারির জন্য ওই ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলেও ভূমি কর্মকর্তা দাবি করছেন ১৬ হাজার টাকা। কথোপকথনের সময় পাশে বসে থাকা ব্যক্তিটিকে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই নামজারি করার জন্য উৎসাহিত করতে দেখা যায়। এ সময় তিনি ‘ন্যায্য ও নির্ধারিত টাকায়, নিয়ম মেনে’ অফিসে কাজ করতে গেলে যে ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়, তা বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। একই সময় সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজনকে গোপনীয়তা বজায় রাখতে দেখা যায়। ওই কর্মকর্তার কানে কানে কথা বলতেও দেখা যায় অনেককে। কথোপকথনের একপর্যায়ে ভূমি কর্মকর্তা বলেন, এইটা তো আমার অফিসের কাজ। আরে এইটা দেবেন আমার অফিসে, আর আপনি নিয়ে ওইখানে (উপজেলা ভূমি অফিস) করে নেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার ওই ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসন। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক আদেশে নাছরিন সুলতানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও সরকারী বিধি মোতাবেক সাময়িকভাবে বরখাস্ত করণের আদেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে নাছরিন সুলতানা অফিসে এসে জনতার তোপের মুখে পরেন। ঘুষ গ্রহনের ভিডিও দেখে ভুক্তভোগীরা ভিড় জমান তার অফিসে। এ সময় অফিস সহকারীর সহযোগিতা দ্রুত অফিস থেকে পলায়ন করলে জনতার রোষানল থেকে রক্ষা পান এ কর্মকর্তা। এসময় ভুক্তভোগীরা তাদের ঘুষের টাকা ফেরতের দাবীতে বিক্ষোভ করে। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখে তদন্ত করে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ- শফিকুল ইসলাম সবুজ।
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন আল-মদিনা সুপার মার্কেট, সিড্ ষ্টোর বাজার, ভালুকা,ময়মনসিংহ। ই-মেইলঃ bhalukainfo@gmail.com
যোগাযোগঃ- ✆ ০১৭১৫৮১৫৬৪৭, ০১৯১৮১৯৯৮৭৩
Copyright © 2024 মুক্তকণ্ঠ. All rights reserved.