জি এম ইব্রাহীম,হাতিয়া প্রতিনিধি: সকালের সোনা রোদ উঁকি দিচ্ছে। দিগন্ত জুড়ে বাদামী বালুর চর। রোদের তেজ বাড়ার সাথে সাথে মণি-মুক্তার মত জ্বলে ওঠে বালুর চর। চরের পাশেই কেওরা বন। দক্ষিণের বাতাসে বনের গাছ গুলো সুর তুলে দুলছে। এ যেন সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে আসা কোন এক বেহালাবাদকের ক্লান্তিহীন গানের সুর। এর মাঝেই মাথার উপর এন্টেনা তুলে ছুটে চলছে হাজারো লাল কাকড়া। মানুষ দেখলেই হুড়মুড়িয়ে লুকিয়ে পরছে। আবার পরক্ষণেই কোথা থেকে যেন ফিরে আসছে! বাদামি বিচে লাল কাকড়ার অবাদ ছুটে চলা মোহিত করে পর্যটকদের। এমন অপরূপ সৌন্দর্য্য নিয়ে নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুকে জেগে উঠেছে এম আলী লালচর। প্রকৃতির ভাঙ্গা গড়ার খেলায় এযেন আরেক বিস্ময়। লাল কাকড়াদের অবাদ বিচরণের কারণেই এই চরের নাম হয়েছে লাল চর। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ভিড় করছে এখানে।নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নে মেঘনার কোল ঘেষে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট্ট একটি ভূ-খন্ড এম আলী লালচর । এটি লালচর পর্যটন কেন্দ্র বলা হলেও এটি মূলত একটি ‘চর’। এক সময় এটিকে টান বাজার বাতাইন্নারচর বলা হতো। এই চরটির একদিকে বাগান জলরাশি অপরদিকে সমুদ্র সৈকত এছাড়াও রয়েছে মায়াবী হরিণ আর গরু মহিষ ও ভেড়ার পাল।
লালচরে নানা প্রজাতির পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিশি বক, কানি বক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এ মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। পাখি বা হরিণ দেখতে হলে খুব ভোরে উঠতে হবে। পাখি দেখতে হলে ট্রলারে করে পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোতে যেতে হবে। একটু কষ্টকর,কাঁদা মাটি ঠেলে যেতে হবে সেখানে। আর রয়েছে কবিরের চরে হাজার হাজার মহিষের পাল। সব মিলিয়ে এই কষ্টের গভীনে লুকিয়ে আছে এক অতৃপ্ত সৌন্দর্য। লালচর সম্পর্কে বুড়িরচর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, এম আলী লালচর ভ্রমনের জন্য মনোরম পরিবেশ রয়েছে। যদি এই চরকে পর্যটকদের পর্যটন কেন্দ্র রূপে গড়ে তোলা যায় তাহলে হাতিয়ার শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র হবে।
এইসময় লালচরের ভূখন্ডের পরিমাণ নিয়ে কথা বলেন,মাষ্টার মোঃ মহসীন। তিনি বলেন,এই এম আলী লালচর, বাগানের পাশ পাঁচ কিলোমিটার, বালুর পাশ এক কিলোমিটার, সমতল ভূমির পাশ পাঁচ কিলোমিটার। মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ২শ হেক্টোর। আর অপরদিকে দৈর্ঘের কোন সীমারেখা নেই বললেই চলে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিক করা গেলে সারা বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা এখানে আসতে পারতো। এর মাধ্যমে এই চরের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা সম্ভাবনা রয়েছে।