ময়মনসিংহ ০২:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাতিয়ার লাল চর পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

দৈনিক মুক্তকণ্ঠ
  • আপলোড সময়: ০৮:৫১:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ৭৪৬ বার পড়া হয়েছে

জি এম ইব্রাহীম,হাতিয়া প্রতিনিধি: সকালের সোনা রোদ উঁকি দিচ্ছে। দিগন্ত জুড়ে বাদামী বালুর চর। রোদের তেজ বাড়ার সাথে সাথে মণি-মুক্তার মত জ্বলে ওঠে বালুর চর। চরের পাশেই কেওরা বন। দক্ষিণের বাতাসে বনের গাছ গুলো সুর তুলে দুলছে। এ যেন সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে আসা কোন এক বেহালাবাদকের ক্লান্তিহীন গানের সুর। এর মাঝেই মাথার উপর এন্টেনা তুলে ছুটে চলছে হাজারো লাল কাকড়া। মানুষ দেখলেই হুড়মুড়িয়ে লুকিয়ে পরছে। আবার পরক্ষণেই কোথা থেকে যেন ফিরে আসছে! বাদামি বিচে লাল কাকড়ার অবাদ ছুটে চলা মোহিত করে পর্যটকদের। এমন অপরূপ সৌন্দর্য্য নিয়ে নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুকে জেগে উঠেছে এম আলী লালচর। প্রকৃতির ভাঙ্গা গড়ার খেলায় এযেন আরেক বিস্ময়। লাল কাকড়াদের অবাদ বিচরণের কারণেই এই চরের নাম হয়েছে লাল চর। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ভিড় করছে এখানে।নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়ার বুড়িরচর  ইউনিয়নে মেঘনার কোল ঘেষে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট্ট একটি ভূ-খন্ড এম আলী লালচর । এটি লালচর পর্যটন কেন্দ্র  বলা হলেও এটি মূলত একটি ‘চর’। এক সময় এটিকে টান বাজার বাতাইন্নারচর বলা হতো। এই চরটির একদিকে বাগান জলরাশি অপরদিকে সমুদ্র সৈকত এছাড়াও রয়েছে মায়াবী হরিণ আর গরু মহিষ ও ভেড়ার পাল।

এখানে হাজার পাখির কিচিরমিচির কলতান নিস্তব্দতার ঘুম ভাঙ্গায়,চিকচিক মরিচিকা হাতছানি দেয় বালুচরে তার মাঝে দাঁড়ানো সারি সারি খেজুর গাছ,মায়াবী হরিনের পদচারনায় মুখরিত হয় ইন্দ্রিয়,মাইলের পর মাইল সারি সারি কেওড়া গাছের বুক চিরে বয়ে চলে ছোট নদী,সমুদ্রের বুকে হেলে পড়ে অস্তগামী রক্তিম সূর্য,সমুদ্রকোল হতে সরু খাল সবুজের বুক চিরে চলে গেছে গহীন বনে। যেন সবুজের গালিচা বিছিযয়ে দেয়া হয়েছে সমুদ্রের তলানী পর্যন্ত। এ এমনই এক মোহনীয় প্রকৃতি যা শহুরে কর্মচঞ্চল মানুষকে নতুন প্রান দেয়। এই এম আলী লালচরটি একবারেই আলাদা। সব যান্ত্রিকতার বাইরে স্নিগ্ধ মোহনীয়। এখানে নেই জনস্রোত,রং বেরং বাতির ঝলকানি বা পোড়া তেলের গন্ধ। এ যেন পৃথিবীর মুগ্ধ রূপ।এম আলী লালচরের জীববৈচিত্র্যে:
নানা জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে ভরপুর এ দ্বীপ। শীতকালে এখানে বসে হাজার রকমের অতিথি পাখির মেলা। রয়েছে কেওড়া বন,স্থানীয়রা যাকে বলে কেরপা বন। ইদানিং বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও রোপণ করছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ। এ বনে আরো আছে উদ্বিড়াল, মেছো বাঘ, বনকুকুর, সাপ, খেকশিয়াল ইত্যাদি।

লালচরে নানা প্রজাতির পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিশি বক, কানি বক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে  চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এ মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। পাখি বা হরিণ দেখতে হলে খুব ভোরে উঠতে হবে। পাখি দেখতে হলে ট্রলারে করে পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোতে যেতে হবে। একটু কষ্টকর,কাঁদা মাটি ঠেলে যেতে হবে সেখানে। আর রয়েছে কবিরের চরে হাজার হাজার মহিষের পাল। সব মিলিয়ে এই কষ্টের গভীনে লুকিয়ে আছে এক অতৃপ্ত সৌন্দর্য। লালচর সম্পর্কে বুড়িরচর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, এম আলী লালচর ভ্রমনের জন্য মনোরম পরিবেশ রয়েছে। যদি এই চরকে পর্যটকদের পর্যটন কেন্দ্র রূপে গড়ে তোলা যায় তাহলে হাতিয়ার শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র হবে।
এইসময় লালচরের ভূখন্ডের পরিমাণ নিয়ে কথা বলেন,মাষ্টার মোঃ মহসীন। তিনি বলেন,এই এম আলী লালচর, বাগানের পাশ পাঁচ কিলোমিটার, বালুর পাশ এক কিলোমিটার, সমতল ভূমির পাশ পাঁচ কিলোমিটার। মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ২শ হেক্টোর। আর অপরদিকে দৈর্ঘের কোন সীমারেখা নেই বললেই চলে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিক করা গেলে সারা বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা এখানে আসতে পারতো। এর মাধ্যমে এই চরের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্যাগস :

Please Share This Post in Your Social Media

About Author Information

হাতিয়ার লাল চর পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

আপলোড সময়: ০৮:৫১:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

জি এম ইব্রাহীম,হাতিয়া প্রতিনিধি: সকালের সোনা রোদ উঁকি দিচ্ছে। দিগন্ত জুড়ে বাদামী বালুর চর। রোদের তেজ বাড়ার সাথে সাথে মণি-মুক্তার মত জ্বলে ওঠে বালুর চর। চরের পাশেই কেওরা বন। দক্ষিণের বাতাসে বনের গাছ গুলো সুর তুলে দুলছে। এ যেন সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে আসা কোন এক বেহালাবাদকের ক্লান্তিহীন গানের সুর। এর মাঝেই মাথার উপর এন্টেনা তুলে ছুটে চলছে হাজারো লাল কাকড়া। মানুষ দেখলেই হুড়মুড়িয়ে লুকিয়ে পরছে। আবার পরক্ষণেই কোথা থেকে যেন ফিরে আসছে! বাদামি বিচে লাল কাকড়ার অবাদ ছুটে চলা মোহিত করে পর্যটকদের। এমন অপরূপ সৌন্দর্য্য নিয়ে নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুকে জেগে উঠেছে এম আলী লালচর। প্রকৃতির ভাঙ্গা গড়ার খেলায় এযেন আরেক বিস্ময়। লাল কাকড়াদের অবাদ বিচরণের কারণেই এই চরের নাম হয়েছে লাল চর। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ভিড় করছে এখানে।নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়ার বুড়িরচর  ইউনিয়নে মেঘনার কোল ঘেষে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট্ট একটি ভূ-খন্ড এম আলী লালচর । এটি লালচর পর্যটন কেন্দ্র  বলা হলেও এটি মূলত একটি ‘চর’। এক সময় এটিকে টান বাজার বাতাইন্নারচর বলা হতো। এই চরটির একদিকে বাগান জলরাশি অপরদিকে সমুদ্র সৈকত এছাড়াও রয়েছে মায়াবী হরিণ আর গরু মহিষ ও ভেড়ার পাল।

এখানে হাজার পাখির কিচিরমিচির কলতান নিস্তব্দতার ঘুম ভাঙ্গায়,চিকচিক মরিচিকা হাতছানি দেয় বালুচরে তার মাঝে দাঁড়ানো সারি সারি খেজুর গাছ,মায়াবী হরিনের পদচারনায় মুখরিত হয় ইন্দ্রিয়,মাইলের পর মাইল সারি সারি কেওড়া গাছের বুক চিরে বয়ে চলে ছোট নদী,সমুদ্রের বুকে হেলে পড়ে অস্তগামী রক্তিম সূর্য,সমুদ্রকোল হতে সরু খাল সবুজের বুক চিরে চলে গেছে গহীন বনে। যেন সবুজের গালিচা বিছিযয়ে দেয়া হয়েছে সমুদ্রের তলানী পর্যন্ত। এ এমনই এক মোহনীয় প্রকৃতি যা শহুরে কর্মচঞ্চল মানুষকে নতুন প্রান দেয়। এই এম আলী লালচরটি একবারেই আলাদা। সব যান্ত্রিকতার বাইরে স্নিগ্ধ মোহনীয়। এখানে নেই জনস্রোত,রং বেরং বাতির ঝলকানি বা পোড়া তেলের গন্ধ। এ যেন পৃথিবীর মুগ্ধ রূপ।এম আলী লালচরের জীববৈচিত্র্যে:
নানা জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে ভরপুর এ দ্বীপ। শীতকালে এখানে বসে হাজার রকমের অতিথি পাখির মেলা। রয়েছে কেওড়া বন,স্থানীয়রা যাকে বলে কেরপা বন। ইদানিং বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও রোপণ করছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ। এ বনে আরো আছে উদ্বিড়াল, মেছো বাঘ, বনকুকুর, সাপ, খেকশিয়াল ইত্যাদি।

লালচরে নানা প্রজাতির পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিশি বক, কানি বক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে  চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এ মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। পাখি বা হরিণ দেখতে হলে খুব ভোরে উঠতে হবে। পাখি দেখতে হলে ট্রলারে করে পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোতে যেতে হবে। একটু কষ্টকর,কাঁদা মাটি ঠেলে যেতে হবে সেখানে। আর রয়েছে কবিরের চরে হাজার হাজার মহিষের পাল। সব মিলিয়ে এই কষ্টের গভীনে লুকিয়ে আছে এক অতৃপ্ত সৌন্দর্য। লালচর সম্পর্কে বুড়িরচর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, এম আলী লালচর ভ্রমনের জন্য মনোরম পরিবেশ রয়েছে। যদি এই চরকে পর্যটকদের পর্যটন কেন্দ্র রূপে গড়ে তোলা যায় তাহলে হাতিয়ার শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র হবে।
এইসময় লালচরের ভূখন্ডের পরিমাণ নিয়ে কথা বলেন,মাষ্টার মোঃ মহসীন। তিনি বলেন,এই এম আলী লালচর, বাগানের পাশ পাঁচ কিলোমিটার, বালুর পাশ এক কিলোমিটার, সমতল ভূমির পাশ পাঁচ কিলোমিটার। মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ২শ হেক্টোর। আর অপরদিকে দৈর্ঘের কোন সীমারেখা নেই বললেই চলে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিক করা গেলে সারা বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা এখানে আসতে পারতো। এর মাধ্যমে এই চরের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা সম্ভাবনা রয়েছে।