ময়মনসিংহ ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিমশীতল দেশের ফুল এখন যশোরে, আশার আলো দেখছে ফুল চাষিরা

দৈনিক মুক্তকণ্ঠ
  • আপলোড সময়: ১০:১৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ২৩৯ বার পড়া হয়েছে

ফারুক হাসান,বেনাপোল প্রতিনিধিঃ হিমশীতল দেশের ফুল টিউলিপ। গ্রীস্মমন্ডলীয় দেশে এর দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু শীত-গ্রীষ্মের বাধা পেরিয়ে গাজীপুর দিয়ে শুরু হয়ে ছিলো টিউলিপের বাংলা জয়ের গল্প। এবার সেই শীত প্রধান দেশের টিউলিপ চাষে সফল হয়েছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীর ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন। তার বাগানজুড়ে ফুটেছে রাজসিক সৌন্দর্যের এই ফুল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, বাংলাদেশের মতো গরম প্রধান দেশে টিউলিপ ফোটানো রীতিমতো সাধনার বিষয়। ইসমাইলের টিউলিপ চাষের মধ্য দিয়ে গদখালীতে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নেদারল্যান্ডস এই ফুল রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এ দেশে টিউলিপ চাষ করতে যা যা প্রয়োজন সব করা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইসমাইলের পাঁচ শতক বাগানে টিউলিপ সারি সারি ফুটে রয়েছে। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই একের পর এক ফুটতে শুরু করেছে এই ফুল। বিভিন্ন রঙয়ের ফুল ফুটেছে বাগানে। দারুণ এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ। ফুল গাছ গুলোর মাথার উপর পলিথিনের একটি ছাউনি দিয়ে চাষ করা হচ্ছে। আর চারপাশ ঢাকা ছোট ছিদ্রযুক্ত নেট দিয়ে। পুরো শেডটিতে বিশেষ পদ্ধতিতে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করা হয় সুর্যের আলো।
ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফুলচাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিনś দেশ ফুলচাষে স্বযংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে আছি। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে পরীক্ষামূলক চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ করার চেষ্টা করছি। তবে এ দেশে ফুল ফুটলেও পরবর্তীকালে রোপণের জন্য টিউলিপ গাছের বাল্ব সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাল্ব সংরক্ষণ করতে হয়। তাই এটা টিউলিপ চাষের বড় সীমাবদ্ধতা। এছাড়া বিদেশ থেকে বাল্ব আনতে বড় অঙ্কের টাকা লাগে।
গদখালীর ফুল চাষিরা জানান, বাণিজ্যিক চাষের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউলিপ ফুলের জাত উদ্ভাবন করতে গবেষণা চলছে। তাদের প্রত্যাশা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টিউলিপের পরীক্ষামূলক চাষ সাফল্যের মুখ দেখবে। ফুলের বাজার ছাড়াও স্থানীয় পর্যটন শিল্পের প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস থেকে সরকারি খরচে সাত প্রকারের পাঁচ হাজার বাল্ব আমদানি করা হয়। ওই বাল্ব ইসমাইল হোসেনের ৫ শতক জমিতে গত ৬ জানুয়ারি বপন করি। ২২ জানুয়ারি থেকে টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সানরাইজ, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), লা বেলা রেড (লাল), মিল্কশেক রেড (লাল) প্রজাতির টিউলিপ ফুটেছে। পর্যায়ক্রমে সাত প্রজাতিরই ফুল ফুটবে বলে আশা করি। আমরা ফুলের রাজ্য গদখালীকে মিনি নেদারল্যান্ডস হিসেবে পরিচিত করে তুলতে চাই।

ট্যাগস :

Please Share This Post in Your Social Media

About Author Information

হিমশীতল দেশের ফুল এখন যশোরে, আশার আলো দেখছে ফুল চাষিরা

আপলোড সময়: ১০:১৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ফারুক হাসান,বেনাপোল প্রতিনিধিঃ হিমশীতল দেশের ফুল টিউলিপ। গ্রীস্মমন্ডলীয় দেশে এর দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু শীত-গ্রীষ্মের বাধা পেরিয়ে গাজীপুর দিয়ে শুরু হয়ে ছিলো টিউলিপের বাংলা জয়ের গল্প। এবার সেই শীত প্রধান দেশের টিউলিপ চাষে সফল হয়েছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীর ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন। তার বাগানজুড়ে ফুটেছে রাজসিক সৌন্দর্যের এই ফুল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, বাংলাদেশের মতো গরম প্রধান দেশে টিউলিপ ফোটানো রীতিমতো সাধনার বিষয়। ইসমাইলের টিউলিপ চাষের মধ্য দিয়ে গদখালীতে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নেদারল্যান্ডস এই ফুল রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এ দেশে টিউলিপ চাষ করতে যা যা প্রয়োজন সব করা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইসমাইলের পাঁচ শতক বাগানে টিউলিপ সারি সারি ফুটে রয়েছে। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই একের পর এক ফুটতে শুরু করেছে এই ফুল। বিভিন্ন রঙয়ের ফুল ফুটেছে বাগানে। দারুণ এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ। ফুল গাছ গুলোর মাথার উপর পলিথিনের একটি ছাউনি দিয়ে চাষ করা হচ্ছে। আর চারপাশ ঢাকা ছোট ছিদ্রযুক্ত নেট দিয়ে। পুরো শেডটিতে বিশেষ পদ্ধতিতে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করা হয় সুর্যের আলো।
ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফুলচাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিনś দেশ ফুলচাষে স্বযংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে আছি। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে পরীক্ষামূলক চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ করার চেষ্টা করছি। তবে এ দেশে ফুল ফুটলেও পরবর্তীকালে রোপণের জন্য টিউলিপ গাছের বাল্ব সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাল্ব সংরক্ষণ করতে হয়। তাই এটা টিউলিপ চাষের বড় সীমাবদ্ধতা। এছাড়া বিদেশ থেকে বাল্ব আনতে বড় অঙ্কের টাকা লাগে।
গদখালীর ফুল চাষিরা জানান, বাণিজ্যিক চাষের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউলিপ ফুলের জাত উদ্ভাবন করতে গবেষণা চলছে। তাদের প্রত্যাশা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টিউলিপের পরীক্ষামূলক চাষ সাফল্যের মুখ দেখবে। ফুলের বাজার ছাড়াও স্থানীয় পর্যটন শিল্পের প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস থেকে সরকারি খরচে সাত প্রকারের পাঁচ হাজার বাল্ব আমদানি করা হয়। ওই বাল্ব ইসমাইল হোসেনের ৫ শতক জমিতে গত ৬ জানুয়ারি বপন করি। ২২ জানুয়ারি থেকে টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সানরাইজ, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), লা বেলা রেড (লাল), মিল্কশেক রেড (লাল) প্রজাতির টিউলিপ ফুটেছে। পর্যায়ক্রমে সাত প্রজাতিরই ফুল ফুটবে বলে আশা করি। আমরা ফুলের রাজ্য গদখালীকে মিনি নেদারল্যান্ডস হিসেবে পরিচিত করে তুলতে চাই।