রামগঞ্জে শিশু নুসরাত ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় রুবেলের ফাঁসির রায়
- আপলোড সময়: ০৯:৩০:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
- / ২৭২ বার পড়া হয়েছে
সাখাওয়াত হোসেন জাহাঙ্গীর,রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের সেই চাঞ্চল্যকর সাত বছরের শিশু নুসরাত জাহান নুশু ধর্ষন ও হত্যা মামলায় শাহ আলম রুবেল নামের একজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জজ আদালত। আজ মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুদ্দৌলা কুতুবী এ রায় দেন। একইসঙ্গে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও আরও চার বছর সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। একই মামলায় বোরহান উদ্দিন নামের অপর এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলী এডভোকেট মো. আবুল বাশার। এদিকে রায়ের পর আদালতপাড়ায় অপেক্ষমান মামলার বাদি শিশু নুসরাতের মা রেহানা বেগম ও চাচা আকবর হোসেন রায়ের সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং রায় দ্রুত কার্যকরের দাবী জানান।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের ফয়েজে নূর মাদ্রাসার ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ২০১৮ ইং সনের ২৩ মার্চ দুপুরে বাড়ী থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ঘটনায় নুসরাতের মা রেহানার বেগম রামগঞ্জ থানায় একটি ডায়েরী করেন। পরে ২৬মার্চ তারিখে রামগঞ্জ থানা পুলিশ উপজেলার ব্রক্ষ্মপাড়ার ব্রীজের নীচ থেকে নুসরাতের বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে তদন্তে ধর্ষন ও হত্যাকান্ড প্রমাণিত হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে ও ১৩ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহনের পর এ রায় দেন।উল্লেখ্য ঃ ২০১৮ইং সনের ২৩ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের সামান্য আগে রামগঞ্জ উপজেলার ২নম্বর নোয়াগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম নোয়াগাঁও কালা মেস্ত্রি বাড়ীর সৌদি প্রবাসী এরশাদ মিয়ার কন্যা স্থানীয় ফয়েজে রাসূল নুরানী মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীর ছাত্রী নুশরাত নুশু (৭) নিখোঁজ হয়। বাড়ী ও তার আশেপাশে খোজাখুজি করেও নুশরাতকে না পেয়ে শনিবার সকালে নুশরাতের মা রেহানা বেগম রামগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করলে থানা পুলিশও কোন কুলকিনারা করতে পারেনি।
নিখোঁজের তিনদিন পর ২৬ মার্চ সকাল ১১টায় নুশরাতের বাড়ী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে পাশ্ববর্তি কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপাড়া গ্রামের ঠাকুর বাড়ীর ওয়াপদা খালে ভাসমান ব্যাগ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় রামগঞ্জ থানা পুলিশের এস আই এস আই কাউসারুজ্জামান। এসময় স্থানীয় এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে পুলিশ ব্যাগ খুলে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় একটি মেয়ে শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন মা রেহানা বেগম ও মামা জিয়া উদ্দিন। কানের দুল ও জামা দেখে নুশরাতের লাশ শনাক্ত করেন তারা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর হসপিটালে মর্গে প্রেরণ করলে ধর্ষন ও শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত মিলে। পুলিশ কৌশলে মাঠে নামেন ধর্ষন ও হত্যাকারীদের আটক করতে। নুশরাতের লাশের সাথে উদ্ধার হওয়া ব্যাগ ও ছবি দিয়ে লিফলেট বিতরন করা হয় জেলাব্যপি। এক সপ্তাহ পর লাশের ব্যাগ বহনকারী সিএনজি অটোরিক্সাচালক মোঃ রাকিব হোসেন স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন রানাকে অবগত করেন বিষয়টি। আটক করা হয়, ধর্ষন ও হত্যাকান্ডের মূল হোতা শাহ আলম রুবেলের বন্ধু নোয়াগাঁও বাজার ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিনকে। বোরহান উদ্দিনের দেয়া তথ্যমতে ২০১৮ইং সনের ১ এপ্রিল মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের সূত্র ধরে রামগঞ্জ থানা পুলিশ খুলনা মেট্রো পলিটন পুলিশ ধর্ষক ও খুনী শাহ আলম রুবেল (৩২) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরে শাহ আলম রুবেল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধিতে জানান, ঘটনার দিন শুক্রবার সকালে আইসক্রীম খাওয়ার লোভ দেখিয়ে শিশু নুশরাতকে তার ঘরে ডেকে নেয়ার পর গলা ছেপে ধরে জোরপুর্বক নুশরাতকে ধর্ষন করা অবস্থায় শ্বাসরোধ হয়ে সে মারা যায়। লাশ লুকানোর জন্য পাটি দিয়ে মুড়িয়ে স্টীলের আলমিরার উপর রেখে দেয়। রাতে হাত পা মুড়িয়ে নুশরাতের লাশ ব্যাগে ভরে ঐদিন রাতেই ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ী বন্ধু বোরহানের সহযোগীতায় ডেকে আনা হয় সিএনজি চালক রাকিবকে। লাশ ভর্তি ব্যাগটি সিএনজিতে তুলে বাড়ী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে ব্রহ্মপাড়া ঠাকুর বাড়ীর খালে ফেলে দেয়া হয়।