ময়মনসিংহ ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেনাপোল বন্দরে ভারতীয় ট্রাকসহ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ছাই

দৈনিক মুক্তকণ্ঠ
  • আপলোড সময়: ০২:৩৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১
  • / ৩৩১ বার পড়া হয়েছে

ফারুক হাসান,বেনাপোল প্রতিনিধিঃ বেনাপোল স্থলবন্দর যেন জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। গত ৫ বছরে পুড়েছে ৪০০ কোটি টাকার পন্য। প্রতি বছর এ বন্দরে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছ, তাতে বন্দর কতৃপক্ষের কোন নজর নেই। গ্রহন করা হয়নি সুষ্ঠ কোন পরিকল্পনা। বাড়ানো হয়নি বন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটের লোকবল ও সক্ষমতা। নামে মাত্র ফায়ার ইউনিট থাকলে বছর জুড়ে থাকে অকেজো। বছরের পর বছর বন্দরে আগুন লেগে কোটি কোটি টাকার অমদানিকৃত পন্য পুড়ে ছাই হচ্ছে। বন্দরে অগ্নিকান্ডের কারনে প্রতি বছর আমদানিকারকরা নিঃস্ব হচ্ছে।বন্দরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানি কারকদের ক্ষতি পূরনের কোন বিধান না থাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বন্দর কতৃপক্ষ অনেকটা উদাসীন। প্রতি বছর বন্দরে আগুন লাগে নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী ও বাংলাদেশ স্থল বন্দরের চেয়ারম্যানসহ বন্দরের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল অগ্নিকান্ডের স্থান পরিদর্শন করেন, তদন্ত কমিটি করেন। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়না। ২০১৬সাল থেকে ২০২১ সাল প্রতিবছর বন্দরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।২০১৬ সালের ২রা অক্টোবর বন্দরে ২৩নং শেডে দাহ পদার্থ থেকে আগুন লেগে বন্দরের স্থাপনাসহ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। সে সময় পুড়ে যায় বন্দরের পাশে অবস্থিত বেনাপোল পোর্টথানা সহ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা অনেক যানবাহন। ভারত বাংলাদেশের যৌথ ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট প্রায় আট ঘন্টা পর আগুর নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। এরপর ২০১৮সালে ৩রা জুন রাতে বন্দরের টিটি-০১ নং শেডে এসিডের ড্রাম বিস্ফোরিত হয়ে পণ্য বোঝায় ১২টি ভারতীয় ট্রাকসহ শেডে রক্ষিত বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যশোর ও ঝিকরগাছা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট সাড়ে তিন ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০০ কোটির টাকার মত। দফায় দফায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একদিকে যেমন আমদানি কারকরা সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অপর দিকে অনেক আমদানি কারক এ বন্দর দিয়ে পন্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে বেনাপোল বন্দরের ৩৫ নং কেমিক্যাল শেডের সামনে অগ্নিকান্ডে ভারতীয় একটি ট্রাকসহ প্রায় কোটি টাকার আমদানি পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যার আগে থেকেই বন্দর এলাকায় মূসল ধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো। রাত সাড়ে ৭ টার সময় বন্দরের ৩৫ নং শেডের সামনে পন্য খালাশের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ব্লিচিং পাউডার বোঝাই একটি ভারতীয় ট্রাকে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিকভাবে বেনাপোল ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের এক ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়।আগুন নিভানোর আগেই পন্য সহ ট্রাকটি পুড়ে ছাই হয়েগেছে। এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের সহকারি পরিচালক মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।শেড ইনচার্জ মনির হোসেন জানান, শেডের সামনের রাস্তায় ভারতীয় একটি ট্রাকে আগুন দেখতে পেয়ে বন্দর পরিচালক ও ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। আনসার সদস্যরা পাশের গোডাউন থেকে আগুন নিভানো গ্যাস এনে আগুনে নিক্ষেপ করলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১টি ইউনিট এক ঘন্টা চেস্টা করে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন। তবে তিনি জানান, বন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটের লোকবল কম থাকায় আগুন তাৎক্ষনিক নেভানো সম্ভব হয়নি। ফায়ার ইউনিটের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তিনি বলেন। বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান,রাতে ব্লিচিং পাউডার বোঝায় একটি ট্রাকে হঠাৎ আগুন লেগে ট্রাকসহ সমস্ত মালামাল পুড়ে গেছে। কাস্টমস, বন্দর ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত টিম রিপোর্ট দিলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।

ট্যাগস :

Please Share This Post in Your Social Media

About Author Information

বেনাপোল বন্দরে ভারতীয় ট্রাকসহ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ছাই

আপলোড সময়: ০২:৩৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১

ফারুক হাসান,বেনাপোল প্রতিনিধিঃ বেনাপোল স্থলবন্দর যেন জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। গত ৫ বছরে পুড়েছে ৪০০ কোটি টাকার পন্য। প্রতি বছর এ বন্দরে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছ, তাতে বন্দর কতৃপক্ষের কোন নজর নেই। গ্রহন করা হয়নি সুষ্ঠ কোন পরিকল্পনা। বাড়ানো হয়নি বন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটের লোকবল ও সক্ষমতা। নামে মাত্র ফায়ার ইউনিট থাকলে বছর জুড়ে থাকে অকেজো। বছরের পর বছর বন্দরে আগুন লেগে কোটি কোটি টাকার অমদানিকৃত পন্য পুড়ে ছাই হচ্ছে। বন্দরে অগ্নিকান্ডের কারনে প্রতি বছর আমদানিকারকরা নিঃস্ব হচ্ছে।বন্দরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানি কারকদের ক্ষতি পূরনের কোন বিধান না থাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বন্দর কতৃপক্ষ অনেকটা উদাসীন। প্রতি বছর বন্দরে আগুন লাগে নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী ও বাংলাদেশ স্থল বন্দরের চেয়ারম্যানসহ বন্দরের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল অগ্নিকান্ডের স্থান পরিদর্শন করেন, তদন্ত কমিটি করেন। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়না। ২০১৬সাল থেকে ২০২১ সাল প্রতিবছর বন্দরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।২০১৬ সালের ২রা অক্টোবর বন্দরে ২৩নং শেডে দাহ পদার্থ থেকে আগুন লেগে বন্দরের স্থাপনাসহ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। সে সময় পুড়ে যায় বন্দরের পাশে অবস্থিত বেনাপোল পোর্টথানা সহ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা অনেক যানবাহন। ভারত বাংলাদেশের যৌথ ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট প্রায় আট ঘন্টা পর আগুর নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। এরপর ২০১৮সালে ৩রা জুন রাতে বন্দরের টিটি-০১ নং শেডে এসিডের ড্রাম বিস্ফোরিত হয়ে পণ্য বোঝায় ১২টি ভারতীয় ট্রাকসহ শেডে রক্ষিত বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যশোর ও ঝিকরগাছা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট সাড়ে তিন ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০০ কোটির টাকার মত। দফায় দফায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একদিকে যেমন আমদানি কারকরা সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অপর দিকে অনেক আমদানি কারক এ বন্দর দিয়ে পন্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে বেনাপোল বন্দরের ৩৫ নং কেমিক্যাল শেডের সামনে অগ্নিকান্ডে ভারতীয় একটি ট্রাকসহ প্রায় কোটি টাকার আমদানি পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যার আগে থেকেই বন্দর এলাকায় মূসল ধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো। রাত সাড়ে ৭ টার সময় বন্দরের ৩৫ নং শেডের সামনে পন্য খালাশের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ব্লিচিং পাউডার বোঝাই একটি ভারতীয় ট্রাকে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিকভাবে বেনাপোল ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের এক ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়।আগুন নিভানোর আগেই পন্য সহ ট্রাকটি পুড়ে ছাই হয়েগেছে। এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের সহকারি পরিচালক মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।শেড ইনচার্জ মনির হোসেন জানান, শেডের সামনের রাস্তায় ভারতীয় একটি ট্রাকে আগুন দেখতে পেয়ে বন্দর পরিচালক ও ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। আনসার সদস্যরা পাশের গোডাউন থেকে আগুন নিভানো গ্যাস এনে আগুনে নিক্ষেপ করলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১টি ইউনিট এক ঘন্টা চেস্টা করে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন। তবে তিনি জানান, বন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটের লোকবল কম থাকায় আগুন তাৎক্ষনিক নেভানো সম্ভব হয়নি। ফায়ার ইউনিটের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তিনি বলেন। বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান,রাতে ব্লিচিং পাউডার বোঝায় একটি ট্রাকে হঠাৎ আগুন লেগে ট্রাকসহ সমস্ত মালামাল পুড়ে গেছে। কাস্টমস, বন্দর ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত টিম রিপোর্ট দিলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।