ময়মনসিংহ ০৮:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মঠবাড়িয়ায় ওয়াপদা নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় মায়ের কবর খুঁড়ে অন্যত্র নিলেন ৬২ বছরের এক কৃষক

দৈনিক মুক্তকণ্ঠ
  • আপলোড সময়: ০১:০৪:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুন ২০২১
  • / ২৭৮ বার পড়া হয়েছে

শাকিল আহমেদ, মঠবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মায়ের কবর খুড়ে অন্যত্র পুনঃস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মজিদ ফরাজী নামে ৬২ বছর বয়সের এক কৃষক।জানাগেছে, উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মজিদ ফরাজীর মা ২০১৬ সালে ইন্তেকাল করেন। এরপর বাড়ি সংলগ্ন দক্ষিণ তেতুলবাড়িয়া পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক দক্ষিণ তেতুলবাড়িয়া এলাকার মিরুখালী-সাফা খালের পারে ওয়াপদা নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান করেন। এতে মজিদ ফরাজীর মায়ের কবর ওয়াপদার নিচে চাপা পড়ে নিশ্চিহ্ন যাবে। এ খবর শোনার পর মজিদ ফরাজী মানসিক ভাবে অস্থির হয়ে পড়েন।মজিদ ফরাজী জানান, মায়ের কবর রক্ষার জন্য পানি উনśয়ন বোর্ডসহ বিভিনś দপ্তরে ছোটাছুটি করি। কিন্তু তাদের কাজ থেকে কোন সন্তোষজনক উত্তর পাইনি। পরে এলাকাবাসী কবরের হাড্ডিগুলো স্থানান্তরিত করে পুনরায় কবরস্থ করার জন্য বলেন। কিন্তু এতে মায়ের প্রতি অমর্যাদা হবে ও মায়ের আত্বা কষ্ট পাবে বলে আমি ওই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এক পর্যায়ে তিনি সমূলে মায়ের কবর তুলে অন্যত্র কবরস্থ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে গত রমজান মাসে কোদাল ও খোন্তা নিয়ে কবরের চারপাশে খুড়ে পুরো কবরটিকে তিনি মূল মাটি থেকে আলাদা করেন। এরপর কবরের নিচ এক হাত খোড়ার পর একটা করে গাছের গুড়া ঢুকি দেন। এভাবে ৬টি গাছের গুড়ির উপর কবরটি তুলে ফেলেন। আর এই অসাধ্য কাজটি করতে তিনি সময় নিয়েছেন মাত্র ২০ দিনের মতো। তাও আবার রমজান মাসে রোজা রেখে। একজন ৬২ বছরের বৃদ্ধ মানুষ রোজা রেখে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া শুধুমাত্র কোদাল ও খোস্তা নিয়ে এই দুঃসাধ্য কাজটি করে এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দেন।পরর্তীতে তিন হাত চওড়া, পাঁচ হাত লম্বা ও তিন হাত পুরত্ব এই মাটির কবর সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মোটা সুতা, সুপারি গাছ ও কাঠ দিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তা মূল কবর থেকে ১২/১৫ হাত দূরে স্থানান্তর করেন। কৃষক মজিদ ফরাজীর মায়ের প্রতি এই অকৃত্রিম ভালোবাসার খবরটি তার অজান্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষক মজিদ ফরাজীকে স্যালুট জানাচ্ছেন হাজারও মানুষ। স্থানীয়রা জানান, কৃষক মজিদ ফরাজি এলাকায় সহজ সরল ও ধার্মিক মানুষ হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত। তেতুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মঠবাড়িয়া বন্দরের ব্যবসায়ী তানভীর হাফিজ জানান, মজিদ ফরাজীর মায়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার খবর সেফবুক দিতে জানেন না কবর খোড়ার সময় সেলফি তুলতে জানেন না কিংবা মা দিবসে মাকে উইশ করতেও জানেন না কিন্তু হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা ও শক্তি উজাড় করে মাকে যে ভালোবাসতেন এটাই প্রমান। কৃষক মজিদ ফরাজী আরো জানান, আলাহ’র রহমত ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তার মায়ের কবর অন্যত্র পুনঃস্থাপন করতে পেরে তিনি মনে তৃপ্তি পেয়েছেন।

ট্যাগস :

Please Share This Post in Your Social Media

About Author Information

মঠবাড়িয়ায় ওয়াপদা নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় মায়ের কবর খুঁড়ে অন্যত্র নিলেন ৬২ বছরের এক কৃষক

আপলোড সময়: ০১:০৪:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুন ২০২১

শাকিল আহমেদ, মঠবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মায়ের কবর খুড়ে অন্যত্র পুনঃস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মজিদ ফরাজী নামে ৬২ বছর বয়সের এক কৃষক।জানাগেছে, উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মজিদ ফরাজীর মা ২০১৬ সালে ইন্তেকাল করেন। এরপর বাড়ি সংলগ্ন দক্ষিণ তেতুলবাড়িয়া পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক দক্ষিণ তেতুলবাড়িয়া এলাকার মিরুখালী-সাফা খালের পারে ওয়াপদা নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান করেন। এতে মজিদ ফরাজীর মায়ের কবর ওয়াপদার নিচে চাপা পড়ে নিশ্চিহ্ন যাবে। এ খবর শোনার পর মজিদ ফরাজী মানসিক ভাবে অস্থির হয়ে পড়েন।মজিদ ফরাজী জানান, মায়ের কবর রক্ষার জন্য পানি উনśয়ন বোর্ডসহ বিভিনś দপ্তরে ছোটাছুটি করি। কিন্তু তাদের কাজ থেকে কোন সন্তোষজনক উত্তর পাইনি। পরে এলাকাবাসী কবরের হাড্ডিগুলো স্থানান্তরিত করে পুনরায় কবরস্থ করার জন্য বলেন। কিন্তু এতে মায়ের প্রতি অমর্যাদা হবে ও মায়ের আত্বা কষ্ট পাবে বলে আমি ওই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এক পর্যায়ে তিনি সমূলে মায়ের কবর তুলে অন্যত্র কবরস্থ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে গত রমজান মাসে কোদাল ও খোন্তা নিয়ে কবরের চারপাশে খুড়ে পুরো কবরটিকে তিনি মূল মাটি থেকে আলাদা করেন। এরপর কবরের নিচ এক হাত খোড়ার পর একটা করে গাছের গুড়া ঢুকি দেন। এভাবে ৬টি গাছের গুড়ির উপর কবরটি তুলে ফেলেন। আর এই অসাধ্য কাজটি করতে তিনি সময় নিয়েছেন মাত্র ২০ দিনের মতো। তাও আবার রমজান মাসে রোজা রেখে। একজন ৬২ বছরের বৃদ্ধ মানুষ রোজা রেখে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া শুধুমাত্র কোদাল ও খোস্তা নিয়ে এই দুঃসাধ্য কাজটি করে এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দেন।পরর্তীতে তিন হাত চওড়া, পাঁচ হাত লম্বা ও তিন হাত পুরত্ব এই মাটির কবর সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মোটা সুতা, সুপারি গাছ ও কাঠ দিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তা মূল কবর থেকে ১২/১৫ হাত দূরে স্থানান্তর করেন। কৃষক মজিদ ফরাজীর মায়ের প্রতি এই অকৃত্রিম ভালোবাসার খবরটি তার অজান্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষক মজিদ ফরাজীকে স্যালুট জানাচ্ছেন হাজারও মানুষ। স্থানীয়রা জানান, কৃষক মজিদ ফরাজি এলাকায় সহজ সরল ও ধার্মিক মানুষ হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত। তেতুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মঠবাড়িয়া বন্দরের ব্যবসায়ী তানভীর হাফিজ জানান, মজিদ ফরাজীর মায়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার খবর সেফবুক দিতে জানেন না কবর খোড়ার সময় সেলফি তুলতে জানেন না কিংবা মা দিবসে মাকে উইশ করতেও জানেন না কিন্তু হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা ও শক্তি উজাড় করে মাকে যে ভালোবাসতেন এটাই প্রমান। কৃষক মজিদ ফরাজী আরো জানান, আলাহ’র রহমত ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তার মায়ের কবর অন্যত্র পুনঃস্থাপন করতে পেরে তিনি মনে তৃপ্তি পেয়েছেন।