ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বাবা শ্রী জিতেন কুমার সাহা ছিলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালের একজন ওয়ার্ডবয়। আর সে সুবাদেই এসএসসি পাস করে গ্রামের বাড়িতেই চেম্বার খুলে মানসিক রোগীর চিকিৎসা শুরু করে দেন ছোট ছেলে সুব্রত কুমার সাহা ওরফে শিপু। তিনি এখন এলাকার আলোচিত ও সমালোচিত মানসিক রোগীর কথিত ডাক্তার। চিকিৎসা সাস্ত্রে কোন ধরণের যোগ্যতা না থাকলেও বাবার উত্তরসূরী হিসেবে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্রসহ নিজ ফার্মেসী থেকে ঔষধ বিক্রি করে অবৈধ এই ব্যবসাটি করতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা তার। এলাকার কিছু প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় অনিয়মত্রান্তিকভাবে ইনজেকশন ও বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক দিয়ে মানসিক চিকিৎসার নামে নির্বিঘে চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের খেটে খাওয়া ও সহজ সরল মানুষদের সাথে তার এই প্রতারণা।আর প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার উথরা ইউনিয়নের খোলাবাড়ি গ্রামের সাহাপাড়ায়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিএনজি চালিত অটোরিক্সার দীর্ঘ লাইন। ডাক্তারের চেম্বারের পাশে একটি সিঙ্গারা ও চা-পানের দোকান। দোকানে ভীড় রোগীর স্বজনদের। প্রতি শুক্রবারই ভালুকা উপজেলা ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে দালালের মাধ্যেমে আসা অসহায় ও হতদরিদ্র শ্রেণীর প্রায় দুই শতাধিক রোগী দেখেন তিনি। তাছাড়া প্রতিদিনতো প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী দেখে থাকেন। স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শেল্টারে কথিত ডাক্তার শিপু তার এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে নিরিহ, অসহায়, অবলা ও হতদরিদ্র গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। তিনি তার বাড়ির পাশে একটি ঘর নির্মাণ করে চেম্বার করেছেন এবং নিজস্ব ঔষধের ফার্মেসীতে সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন। ব্যবস্থাপত্র তিনি নিজেই লেখেন এবং তার লেখা সব ঔষধ নিজের ফার্মেসীতেই রাখেন। তার দাবি যদিও তিনি ভিজিট নেননি কিন্তু একজন রোগীর ইনজেকশন ও বিভিন্ন ঔষধসহ ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এমনও রোগী আছেন মাসে দুইবার তার কাছে আসতে হয়। আর প্রতিবার তাকে নগদ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দিতে হয়। তাছাড়া স্থাণীয় উথুরা বাজারে অবস্থিত লাইসেন্স বিহিন সৈয়দ ডায়াগনস্টিক এন্ড টেলিমেডিসিন সেন্টারের প্যাডে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন টেস্ট লিখে পাঠিয়ে দেন। আর ভূয়া ওইসব টেস্টের মাধ্যমে অর্ধেকের বেশি কমিশন কামিয়ে নেন কথিত ডাক্তার শিপু। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এক যুবক মোটরসাইকেলের মাথায় ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্টিকার লাগানো অবস্থায় ডাক্তারের চেম্বার থেকে ভূয়া রিপোর্ট ও কমিশনের টাকা দিয়ে বের হয়ে যেতে। অর্থাৎ সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী এনে চিকিৎসার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিনব কৌশল। রতœা নামে এক মানসিক রোগীর অহভাগা পিতা দুদু মিয়া জানান, তার বাড়ি পাশের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কিশোরগঞ্জে। বহু বছর ধরেই চিকিৎসা করছেন শিপু ডাক্তারের কাছে। তার কিশোরী মেয়ে রত্না আক্তার (১৯) এই ভালো, এই খারাপ। তিনি বলেন, আজও একটি ইনজেকশন ও অন্যান্য ক্যাপসুল ও ট্যাবলেটসহ শিপু ডাক্তার ঔষধের দাম নিয়েছেন দুই হাজার ১০০ টাকা। তাছাড়া ফুলবাড়িয়ার সাগরদীঘি এলাকার আব্দুল কাদের (৪০), ড্রাইভার, রুপালী আক্তার ও হযরত আলীসহ অনেক রোগীর সাথেই কথা হয়। রোগীদের সাথে আসা লোকজন একই অভিযোগ করেন, ইনজেকশন দিলে কিছু সময় ভালো থাকে, আবার আগের মতোই আচরণ করে রোগীরা। কিন্তু মাসের পর মাস চিকিৎসা করেই যাচ্ছেন শিপু ডাক্তারের কাছে।স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিপু ডাক্তারের শিক্ষাগত তেমন যোগ্যতা নেই বললেই চলে। তার বাবা ছিলেন পাবনা মেন্টাল হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়। আর ওই সূত্রেই অবৈধভাবে তিনি মানসিক রোগীর চিকিৎসা করে আসছেন বহুদিন ধরে। তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালদের মাধ্যমে রোগী এনে হতদরিদ্র রোগীদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও খেয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বার বারই পার পেয়ে যাচ্ছেন এবং আবারো অবৈধ এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য অনেক চেষ্টা করে সাক্ষাতের সুযোগ হয় কথিত শিপু ডাক্তারের সাথে। কিন্তু বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরই তিনি এড়িয়ে যান এবং বলেন, তারিখ দিয়ে আসবেন। পরে এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মোবাইলে এই প্রতিবেদককে এ ব্যাপারে নিউজ না করার জন্য বার বার অনুরোধ করেন।