‘সরকারি জমিত থাহি, আমার ভাংগা চাল দে-য়া পানি পরে’
- আপলোড সময়: ০৪:৫৫:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
- / ৪৫২ বার পড়া হয়েছে
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বাবুল মিয়া। তিনি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। স্ত্রী, পাঁচ ছেলে-মেয়ে আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তার আট সদস্যের সংসার। বাবুল মিয়ার স্ত্রী নাজমা আক্তার গৃহিনী, ছেলে ইমন(১৬) উপজেলার দীপ্তি একাডেমীর এসএসসি পরীক্ষার্থী, নাদিম(১২) স্থানীয় দাখিল মাদরাসায় ৫ম শ্রেণিতে, নিলয়(৮) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত, মেয়ে শ্যামা(৫) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করে। আর তার পঞ্চম সন্তান নীরবের বয়স মাত্র চার মাস। মা আজিমন নেছা(৭৫) দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থায় ভোগছেন। কাঠমিস্ত্রীর সামান্য আয় দিয়ে কোন মতে কায়ক্লেশে চলে হতদরীদ্র বাবুল মিয়ার নিত্য দিনের সংসার। মাথাগুঁজার জায়গা না থাকায় প্রায় ১১বছর আগে পরিবার নিয়ে তিনি ঠাঁই নিয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পূর্বসীমান্তবর্তী ধীতপুর ইউনিয়নের সুতিয়া নদীর পাড়ে এক চিলতে সরকারী ভূমিতে। কথা হলে বাবুল মিয়া জানান, তার পৈতৃকবাস ছিল একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায়। তাদের সামান্য কিছু জমিজমা ছিল। তবে, অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া করতে না পেরে মাত্র ১৩বছর বয়সেই তিনি নাম লেখান কাঠমিস্ত্রীর সহযোগির খাতায়। পরবর্তীতে অসুস্থ্য বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের ওই সামান্য ভূমিটুকুও বিক্রি করে দিতে হয়। এ অবস্থায় প্রায় ২২বছর আগে তিনি মাকে নিয়ে মামার বাড়ি ভালুকার ধীতপুর গ্রামে চলে আসেন এবং ধীতপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ধীতপুর গ্রামে এক নিকট আত্মীয়ের জমিতে ছুট্ট একটি ঘর তুলে মাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে বিয়ে করেন এবং সন্তানসন্ততি জন্ম নিয়ে তার সংসার বড় হতে থাকে। প্রায় পনের বছর আগে তার অসুস্থ্য বাবা হালিম উদ্দিন মারা যান। একপর্যায়ে নিকট আত্মীয়ের দেয়া আশ্রয়টুকু ছাড়তে হয় তাকে। এতে, অন্ধকার নেমে আসে বাবুল মিয়ার চোখে। পরে তিনি দূরসম্পর্কের অপর এক আত্মীয়ের পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তায় একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সূতিয়া নদীর পাড়ে এক চিলতে সরকারী ভূমিতে ছোট্ট একটি বসতঘর তৈরী করে বসবাস শুরু করেন এবং প্রায় এগারো বছর আট সদস্যের পরিবার নিয়ে ওই এক ঘরেই গাদাগাড়ি করে কোন মতে মাথাগুঁজে পড়ে আছেন। প্রতিদিন কাঠমিস্ত্রীর সামান্য আয়, মায়ের পাওয়া বয়স্কভাতা আর দুই সন্তানের পাওয়া উপবৃত্তির টাকায় খেয়ে না খেয়ে কোন মতে চলে তার নিত্যদিনের সংসার এবং ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর অসুস্থ্য মায়ের চিকিৎসা। অনেক সময় প্রতিদিন কাজও জুটে না। আবার কয়েকদিন অসুস্থ্য থাকলে তার উপার্জনে ভাটা পড়ে। তখন পরিবার নিয়ে না খেয়েও থাকতে হয়। ইতোমধ্যে, জং ধরেছে কম মূল্যের পাতলা টিনে ছাওয়া বাবুল মিয়ার ঘরের চালে। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়ে। ঘরের বেড়া নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। অনেক দিন ধরেই তার অভারে সংসারে যুক্ত হয়েছে বর্ষার বৃষ্টির পানি আর শীতে নদীর পাড়ের ঠান্ডা বাতাস। এ অস্থায় স্থায়ীভাবে মাথাগুঁজার আশ্রয় হিসাবে সরকারের কাছে সামান্য একটু জমি আর একটি ঘরের দাবি করছেন তিনি। বালুল মিয়া বলেন, ‘আমি অশিক্ষত মানুষ। কিছু বুঝি না, অনেক দিন আগে আমার এক আত্মীয়রে কইছিলাম আমার নামে ভূমিহীনের এক দরহাস্ত করইরা দেওনের লাইগ্যা। হে হেইডা করছে কি-না জানি না। কিছু দিন আগে এলাকার মেম্বররে কইছিলাম, আমি গরিব মানুষ। সরকারী জমিত থাহি, আমার বাংগা গর দে-য়া পানি পরে। সরকার গরিব মাইনস্যেরে জমি আর গর কইরা দিতাছে। আমারে সকারী জমি আর একটা গর দেওনের লাইগ্যা কইছিলাম। মেম্বর কইছিন আবার আইলে দিব।’ ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. দুলাল ফকির বলেন, ‘বাবুল মিয়া বর্তমানে আমার ওয়ার্ডে খাস সরকারী জমিতে বসবাস করে। তবে, সে তিন নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। ভূমি-ঘরহীনের তালিকায় তার নাম গেছে কি-না তা আমার জানা নাই।’ ৩নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘বাবুল বেশ কয়েক বছর আগে আমার ওয়ার্ড থেকে চলে গেছে।’ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বালেন, ইউনিয়নের জমি ও ঘরহীন মানুষদের তালিকাভূক্তির জন্য আমারা মাইকিং করেছি। তালিকা করেছে ইউনিয়ন ভূমি অফিস। ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, তিনি উপজেলার মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের দায়িত্বে আছেন। ধীতপুর ইউনিয়নে প্রায় দুইমাস যাবৎ তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। জমি ও ঘরহীন মানুষের তালিকা অনেক আগেই জমা দেওয়া হয়েছে। বাবুল মিয়ার নাম তালিকাভূক্ত হয়েছে কি-না তা তার জানা নাই। তবে, বাবুল মিয়া সরকারী জমিতে বসবাস করে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।